সাগরের পানি লবণাক্ত কেন?

নদ-নদী, খাল-বিল, হৃদ কিংবা পুকুরের পানি সুপেয়। তাই এসব উৎসের পানিকে বলা হয় মিঠা পানি। কিন্তু সাগরের পানি লবণাক্ত। এই পানি পানযোগ্য নয়। সাগরের পানি এতবেশি লবণাক্ত যে, পিপাসায় বুক ফেটে গেলেও কেউ তা পান করে না। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখছেন যে, এই পানিতে লবণাক্ততার পরিমান শতকরা ৩.৫ ভাগ।

আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে প্রায় ৪ কোটি বছর ধরে এই মাপের বড় একটা পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ সাগরের পানিতে লবণের পরিমাণ বড় একটা বাড়েওনি, কমেওনি।

কিন্তু কথা হলো- এত লবণ এলো কোথা থেকে? ব্যাপারটা বুঝতে হলে পৃথিবীর তৈরি হবার গোড়ার দিকটা আমাদের কিছুটা জানতে হবে। পৃথিবীতে এখন আমরা যে পানি, বাতাস, মাটি প্রভৃতি দেখে থাকি তা কিন্তু পৃথিবী তৈরি হবার সময় ঠিক এ রকমই ছিল না। সব মিলিয়ে তা ছিল বিভিন্ন গলিত শিলা পাথরের তৈরি একটা গোল বল। এরপর অনেক প্রাকৃতিক কারণে তখনকার পৃথিবীর অবস্থা বদলে গিয়ে পৃথিবীর শরীরে বেশ কয়েকটা স্তরের উৎপত্তি হয়।

যেমন ধরুন, এর একেবারে কেন্দ্রস্থলে তৈরি হলো গলিত লাভার এক বিশাল রাজ্য। তার উপরটাতে ঘিরে রইলো ‘ম্যান্টল’ বলে একটা স্তর। তার চারধারে তৈরি হ’ল পৃথিবীর বাইরের শক্ত অঞ্চল! ভৃত্বক (এই ভূত্বকেই আমরা ঘর-বাড়ি তৈরি করছি। রাস্তা বানাচ্ছি, ফসল ফলাচ্ছি)
ভূত্বকের উপরের স্তরটাই হলো সাগর। ভূত্বক কখনও উঁচু হয়ে পাহাড় তৈরি করল। আবার কখনও নীচু হয়ে সাগরকে ধরে রাখল। কেন্দ্রস্থিত শিলাপাথর থেকে নিষ্কাশিত জলরাশি সাগরগুলোকে কানায় কানায় ভরে ফেলল। সাগরের পরের স্তরটাতে জায়গা হলো বাতাসের। আর তার নাম দেয়া হলো বায়ুমন্ডল। এরপর আসা যাক নোনতা হবার কথায়।

সাগরের বুকে জাহাজ নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে বিজ্ঞানীরা এক মস্তবড় আবিষ্কার করে ফেললেন। সাগরের নিচে একেবারে শেষ সীমানায় পৌঁছলে যে স্তর পাওয়া যায়, বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন ‘সি ফ্লোর’ বা ‘সাগরের মেঝে’। তারা বললেন, এই স্তরটিতে সবসময়ই এক ধরনের চিড় বা ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা আগেই দেখেছি যে, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে আগ্নেয়জাত গলিত শিলার রাজ্য। কাজেই ওপরের স্তরে ফাটলের সৃষ্টি হলে ভেতরকার গলিত শিলাগুলো ফাটল পথে ওপরের স্তরে উঠে আসে। শুধু গলিত শিলাই নয়, এর সাথে গলিত উত্তপ্ত লাভা এবং আরো অনেক গলিত পদার্থ ফাটল পথে উপরে উঠে আসে।

এসব উত্তপ্ত গলিত তরল পদার্থগুলোকে ‘জুডেনাইল ওয়াটার’ বলা হয়ে থাকে। যেহেতু উপরের স্তরে সাগর রয়েছে সেহেতু ‘জুডেনাইল ওয়াটার’ ফাটল দিয়ে সরাসরি সাগরের সংস্পর্শে আসে। সাগরের মেঝে ফেটে যাওয়ার এই প্রক্রিয়ার নাম বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন ‘সি ফ্লোর মেকানিজম’।

আসল কথা হচ্ছে এই ‘জুডেনাইল ওয়াটারই’ সাগরের লবণাক্ততার জন্যে দায়ী। কারণ, ‘জুডেনাইল ওয়াটারের’ ভেতর লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।

শুধু তাই না। সাগরের পানিতে যে ক্লোরিন, ব্রোমিন, আয়োডিন প্রভৃতি পাওয়া যায়, তাও এই ‘জুডেনাইল ওয়াটারই’ বহন করে আনে। এসব পদার্থগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আগে অনেক গবেষণা করেও কিছু স্থির করতে পারতেন না, কিন্তু ‘জুডেনাইল ওয়াটারের’ ভেতর এদের সবকিছুই পাওয়া গেছে।



মন্তব্য চালু নেই