সাংবাদিকদেরই উল্টো দোষারোপ করলেন তারা

ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়ার ঘটনায় শুনানিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদেরই উল্টো দোষারোপ করেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা।

রোববার ইসির তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের (সার্বিক) কাছে ভোটকেন্দ্র সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়ার শুনানির প্রথম দফায় ৩০টি ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এ দোষারোপ করেন।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহা. আনিছুর রহমান ছাড়াও যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইমস অ্যান্ড অপস) ও ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন সমন্বয় শাখার উপ-সচিব আব্দুল ওদুদকে নিয়ে গঠিত হয়েছে এ কমিটি।

প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা লিখিত ও মৌখিকবাবে শুনানিতে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে।

শুনানিতে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, কোনো কর্মকর্তাই সাংবাদিকদের বাধা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। উল্টো ভোটকক্ষের ভেতরে একসঙ্গে অনেক সাংবাদিক উপস্থিতির বিষয়টি প্রিজিইডিং কর্মকর্তারা সমালোচনা করেছেন।

বিভাগীয় কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা মৌখিক ও লিখিতভাবে তদন্ত কমিটিকে তাদের বক্তব্য প্রদান করেন। তারা জানান, ভোটকেন্দ্রে একসঙ্গে একাধিক সাংবাদিক প্রবেশ করেছেন। এমনকি তারা কয়েক মিনিট কেন্দ্রে ঘুরেছেনও। তবে ভোটকেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। সাংবাদিকদের কোনো ধরনের বাধা দেয়া হয়নি।

এছাড়া ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে সাংবাদিকদের পুলিশ বাধা দিয়েছে কি না এ বিষয়টি তারা জানেন না বলেও দাবি করে তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন।

এদিকে কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা ও নাজেহালের ঘটনা ঘটেছে কি না, কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন ছিল, ভোটের দিন সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রে কোনো সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন কি না এবং কতোক্ষণ সেখানে ছিলেন, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে তা জানানো হয়েছিল কি না এবং ভোটকেন্দ্র নিয়ে অন্য কোনো মন্তব্য বা বক্তব্য রয়েছে কি না এই পাঁচটি বিষয়ে শুনানিতে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

শুনানির বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ইসির উপ-সচিব আব্দুল অদুদ বলেন, ‘গতকাল ৩০ প্রিজাইডিং কর্মকর্তার শুনানি হয়েছে। কি ধরনের বক্তব্য পেয়েছি, শুনেছি তা এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেই জানা যাবে।’

আগামী ২০ মে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রর দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও ভোটকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট থানার ওসিদের বক্তব্য শোনা হবে। এরপর ভুক্তভোগী সাংবাদিকদেরও বক্তব্য শোনা হবে। তারপর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কমিশন সচিবালয়ে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা প্রদান সংক্রান্ত নির্বাচনী অনিয়ম খতিয়ে দেখতে এবার পুলিশের শুনানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২০ মে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফায় এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে ইসির উপ-সচিব আব্দুল অদুদ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের ২০ মে’র শুনানিতে উপস্থিত থাকতে ইসির নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

২৮ এপ্রিল ভোটের দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের বাধার বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ভোটের দিন বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি স্বীকার করেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘সাংবাদিকদের বাধা দিয়ে পুলিশের অনিয়মের বিষয়টি নজরে আসার পরপরই ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের পর্যবেক্ষক নীতিমালা পড়ে শুনিয়ে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ নিশ্চিত করেছি।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনের সময় ভেলা ১১টা পর্যন্ত ৩০টি কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। পরে বিষয়টি ইসিতে জানালে ইসির হস্তক্ষেপে ১১টার পর সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়।

এ জন্যে বিষয়টির পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য ঘটনার কারণ উদঘাটন ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে ইসি।



মন্তব্য চালু নেই