দুই সাংবাদিককে মারধর : শাহবাগ থানার এএসআই বহিষ্কার

এটিএন নিউজের ক্যামেরা পারসন আব্দুল আলীম ও রিপোর্টার এহসান বিন দিদারকে মারধর করার ঘটনায় শাহবাগ থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এরশাদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রমনা জোনের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে রাজধানীতে হরতালপালনকারী দুই জনকে আটক করে পুলিশ। এই ফুটেজ নেওয়ার সময় এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিককে মারধর করে পুলিশের ১৫-২০ জন সদস্য। ডিসি মারুফ হোসেন জানান, এসব পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এএসআই এরশাদকে চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত বাকি পুলিশ সদস্যদেরও চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি শাহবাগ থানার এএসআই এরশাদ। ছবিতে তাকে মারধর করতে দেখা গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চিহ্নিত এএসআইকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’ ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত কিনা তা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটা হয়েছে। তবে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

এটিএন নিউজের অ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজ প্রভাষ আমিন তার ফেসবুকে এক পোস্টে এ ঘটনা প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘পুলিশ হরতাল সমর্থকদের পেটাচ্ছিল। তার ছবি তুলছিলেন এটিএন নিউজের ক্যামেরাপারসন আব্দুল আলিম। এ অপরাধে পুলিশ শাহবাগ থানার ভেতরে নিয়ে তাকে পেটাতে থাকে। বাধা দিতে গেলে রিপোর্টার ইশান দিদারকেও পিটিয়েছে পুলিশ। ২০/৩০ জন পুলিশ মিলে এই দুই সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়েছে। এখন তাদের ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হয়েছে। আলিমের আঘাত গুরুতর, ইশানের আঘাতও কম নয়। আমাদের ক্যামেরাম্যান বা রিপোর্টার যদি বেআইনি কিছু করে থাকে, পুলিশ তাদের আটক করতে পারত। এমনও নয় রাস্তায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মাঝখানে পড়ে তারা মার খেয়েছে। ঠাণ্ডা মাথায় থানার ভেতরে নিয়ে ২০/৩০ জন মিলে ২ জন নিরস্ত্র সাংবাদিককে পিটিয়েছে। কেন? এই প্রশ্নের জবাব অবশ্যই চাই। শুধু লোক দেখানো ক্লোজ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। সাংবাদিক নেতা ও সহকর্মীদের অনুরোধ জানাচ্ছি শাহবাগ থানায় গিয়ে এই প্রশ্নের জবাব চান। সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করুন।’

এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ডাকা হরতালে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। আগামী ২৮ জানুয়ারি, শনিবার সারাদেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ দিবস, ঢাকার প্রেসক্লাব ও শাহবাগে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে অবস্থান ধর্মঘটেরও ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় কমিটি।

প্রসঙ্গত, সুন্দরবনের পাশে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের সরে আসার দাবিতে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালন করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। গত ২৬ নভেম্বর শহীদ মিনারের সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ডাকা হয়েছিল। তবে সুন্দরবন ইস্যুতে জাতীয় কমিটির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা সরকারি জোটের শরিক বেসরকারি বিমান ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি এই হরতালে নেই। এই কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। এর বাইরে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, ছাত্রদলসহ কয়েকটি সংগঠন বিবৃতি দিয়ে সমর্থন ব্যক্ত করেছে।



মন্তব্য চালু নেই