সর্দিজ্বর প্রতিরোধে মেনে চলুন ১২ নিয়ম

ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ সর্দিজ্বর। আক্রান্ত ব্যক্তির ছোঁয়ায় অথবা তার ব্যবহার্য জিনিসের মাধ্যমে এটি বেশি ছড়ায়। এ রোগে সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করাসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তবে কিছু সতর্কতা মেনে চললে এ বিরক্তিকর সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।

এ রোগটি ভাইরাসবাহিত হওয়ায় একবার হয়ে যাওয়ার পর তা ওষুধ খেয়ে নয় বরং কিছু নিয়ম পালনের মাধ্যমে এমনিতেই যেন সেরে যায় সেজন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত। চিকিৎসকরা বলছেন, ওষুধ খেয়ে জ্বরটি কমানোর চেয়ে এমনিতেই রোগটি ভালো করা উচিত। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় সহায়ক পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি হয়, যা পরবর্তী সময় রোগ প্রতিরোধে কাজে লাগে।

১. সতর্ক থাকা : সর্দি-জ্বর কিংবা সর্দিতে আক্রান্তদের কাছ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে, ধূমপান করা যাবে না, বাসায় নিয়মিত ধুলা-ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। বাইরে চলাচলের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঘনঘন চোখ ও মুখে হাত দেওয়া যাবে না।

২. হাত ধোয়া : প্রায়ই হাতের মাধ্যমে সর্দি-জ্বরের জীবাণু দেহে প্রবেশ করে। তাই হাত নিয়মিত ধুয়ে ফেলা উচিত। এক্ষেত্রে আপনি যখন অন্য কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসবেন, বাইরে থেকে ঘরে ফিরবেন কিংবা বাইরের কোনো জিনিস নাড়বেন তখনই হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

৩. বিশুদ্ধ বায়ু : বাড়ির ভেতরেও সর্দি-জ্বরের জীবাণু বাস করতে পারে। এক্ষেত্রে বাড়ির ভেতরে যেন বায়ু বিশুদ্ধ থাকে সেজন্য ধুলোবালি দূর করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। স্যাঁতসেতে ও আর্দ্র পরিবেশ থাকলে তা দূর করতে হবে।

৪. ভালো ঘুম : পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই সর্দি-জ্বর প্রতিরোধের জন্য ভালোভাবে ঘুমানো উচিত। এক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা এবং শিশুদের ১০ ঘণ্টা বা বয়স অনুযায়ী তার চেয়ে বেশি ঘুমানো উচিত।

৫. গ্রিন টি ও ব্ল্যাক টি : বিভিন্ন ধরনের চা সর্দি-জ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক্ষেত্রে গ্রিন টি কিংবা ব্ল্যাক টি পান করতে পারেন। এতে লেবুর রস, মধু কিংবা আদা দিলে তা আরও ভালো কাজ করবে।

৬. ভিটামিন সি ও জিংক : রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ভিটামিন সি ভাইরাসের বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করে। এছাড়া খাবারে থাকতে হবে জিংক। এজন্য বিভিন্ন বাদাম, সীম, কুমড়ার বীজ ও পালং শাক খাওয়া যেতে পারে।

৭. শারীরিক অনুশীলন : নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন আপনাকে সুস্থ রাখবে এবং নানা রোগ থেকে রক্ষা করবে। এজন্য প্রতিদিন কমপক্ষে আধ ঘণ্টা জোরে হাঁটা বা জগিংয়ের মতো শারীরিক অনুশীলন করবেন। এছাড়া বেশিক্ষণ বসে থাকা যাবে না এবং শরীর সচল রাখতে হবে।

৮. মুরগির সুপ : মুরগির সুপ নানাধরনের রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করে। তাই আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন মুরগির সুপ।

৯.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা : রোগজীবাণু থেকে মুক্ত থাকার জন্য বাড়ির আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। বাড়ির ভেতরের যেসব স্থানে জীবাণুর বাসা হতে পারে সেসব স্থান ভালোভাবে নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

১০. বাইরের খাবারে সতর্কতা : বাইরের খাবারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে রাস্তার ধারের খাবার থেকে মানুষের দেহে নানা রোগের জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।

১১. পর্যাপ্ত পানি পান : সর্দিজ্বর থেকে দূরে থাকার জন্য শরীরের জলীয় পদার্থের অনুপাত সঠিক রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পানি ও তরল পদার্থ খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয়।

১২. লক্ষণ দেখা গেলে : সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলে গরম লবণ-পানির গড়গড়া করলে, মেনথলসহ গরম পানির ভাপ নিলে, আদা কুচি বা আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ধূমায়িত চা, লেবুর রস মিশ্রিত কুসুম গরম পানি পান, গরম পানি দিয়ে গোসল, তুলসীপাতার রস (যেমন তুলসীর চা) সর্দি উপশম করতে পারে। এছাড়া রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।-টাইমস অব ইন্ডিয়া



মন্তব্য চালু নেই