‘সরকার কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যর্থ’

বিএনপির শাসনামলে কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ এই খাতকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

দলটি বলছে, ‘কৃষক ও কৃষি উন্নয়নে এই সরকার ব্যর্থ হয়েছে। দেশের উৎপাদিত ও আমদানিকৃত সকল পণ্যের সবচেয়ে বড় ভোক্তা কৃষক আজ দিশেহারা। অবৈধ সরকার এই খাতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

এ সময় কৃষিকে বাঁচাতে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। তা না হলে কৃষক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। কৃষকবান্ধব সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ন্যায্য দাবি আদায়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি।

শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে এবং কৃষি উপরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ৮ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির এই মুখপাত্র।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী সব জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি পেশ। ২৪ থেকে ২৮ ডিসেম্বর জেলা-উপজেলায় আলোচনা সভা, ২৯ ডিসেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা সভা এবং ৩০ ডিসেম্বর কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ।

বিএনপির বিগত শাসনামলে বৈপ্লবিক কর্মসূচি গ্রহণের ফলে কৃষিক্ষেত্রে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে ছিলো দাবি করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘অবৈধ সরকারের ওপর মহলের লুটপাটের কারণে কৃষি উপকরণের দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।’

চলিত মৌসুমে দেশে বাস্পার ফলন হলেও সরকারের চাল আমদানির কারণে ধান চাষিরা পথে বসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কৃষকের গোলায়, চাতাল ও গুদামে লক্ষ লক্ষ মেট্রিক টন নতুন ধান , চাল থাকার পরও সরকারিভাবে ও সরকারের আশির্বাদপুষ্ট আমদানিকারকরা ভারত থেকে শুল্কমুক্ত চাল আমদানি করছে। এর ফলে তারা একদিকে নিজেরা মুনাফা করছে, অন্যদিকে কৃষকদের পথে বসিয়ে দিচ্ছে। প্রতি মণ আমন ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা হলেও তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৬৪০ থেকে ৬৬০ টাকায়।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘বর্তমানে কৃষক নানাভাবে বঞ্চিত ও নিগৃহীত হচ্ছে, অথচ তাদের পাশে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। অবৈধ ক্ষমতাসীনদের লালিত সন্ত্রাসীরা তাদের জমি-জমা, ফসল, পুকুর, গবাদিপশু লুটতরাহজ করে নিয়ে যাচ্ছে।’

ধান-চালের মতো আলু, পাট, ভুট্টা, সবজিচাষেও কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে দাবি করেন বিএনপির এই মূখপাত্র।

‘যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণে’ বিএনপির আমলে পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য খাত অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখলে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটে এই খাতে চরম হতাশা বিরাজ করছে বলে দাবি করেন মির্জা আলমগীর। তিনি দাবি করেন, পোল্ট্রি শিল্পে এখন ২০ লাখ লোক বেকার হয়েছে। গুড়ো দুধ আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর ফলে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অসংখ্য ডেইরি ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে মৎস খাত থেকে রপ্তানি আয়ের ৪ দশমিক ৫৬ ভাগ আসলেও তা এখন কমে ২ দশমিক ৭৫ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে।

দলীয়করণ করে সরকার কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি গবেষণা ব্যবস্থাপনা ও বিএডিসিসহ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেধাবী, অভিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক ও গবেষকদের বাদ দিয়ে অযোগ্য অনভিজ্ঞ ও দলবাজ লোকদের দায়িত্ব দেওয়ার ফলে এসব প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের দ্বারপান্তে।’

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সুন্দরবনকে নিঃশেষ করার পরিকল্পনা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বর্তমান দখলদার সরকার সুন্দরবনকে নিঃশেষ করে দিতে চায়। এ লক্ষ্যে সুন্দরবনের পাশে রামপালে ভারতীয় বিষাক্ত কয়লাভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে শ্যালা নদীতে ফার্নেস অয়েল ভর্তি অবৈধ ট্যাংকার ডুবিয়ে দিয়েছে।’ মির্জা আলমগীর এর সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং মদদদাতাদের অবিলম্বে গ্রেফতার দাবি করেন।

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু উপস্থিত ছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই