বিএনপির আলোচনা সভায় ফখরুল

সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের উত্থাপ-পতনে হতাশ না হয়ে সরকারের বিরম্নদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহবান জানিয়ে বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উত্থান-পতন থাকে। একথা ভাববার কারণ নেই, এজন্য আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এতে হতাশ হবার কিছু নেই। বর্তমান সরকার গোটা রাষ্ট্র যন্ত্রকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। এদের বিরম্নদ্ধে আন্দোলন সফল করতে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ইনশালস্নাহ জনগনের জয় হবেই হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র পূনরম্নদ্ধার, আমার দেশ প্রকাশ, পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি ও বাক স্বাধীনতা রক্ষার দাবি’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

চলমান আন্দোলন সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫ জানুয়ারি ভোট বর্জনের আগে যে আন্দোলনের সূচনা হয়েছে, তাতে তিন শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, গুম হয়েছে ৬০ জন। ওই আন্দোলনে গোটা দেশ অচল হয়ে পড়েছিলো। অন্যান্য জেলা থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিলো। অসংখ্য মানুষের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা হয়েছে। কারাগারগুলোতে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী বন্দি হয়ে আছে। এটা ঠিক ওই আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মীরা চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে। এখনো করছে। আমি বিশ্বাস করি, বিএনপি কখনোই বিলিন হয়ে যাবে না। জিয়াউর রহমানের দর্শণ নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে পতাকা উঁচিয়ে রেখেছেন, তা কখনো নিচে পড়বে না।

উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ভোট ডাকাতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, উপজেলায় সরকারের ভোট ডাকাতি প্রমাণ করেছে, ৫ জানুয়ারি আমাদের ভোট বর্জনের সিদ্ধামত্ম সঠিক ছিলো। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই কমিশন একটি অর্থব অপদার্থ প্রতিষ্ঠান। কোনো কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই। কয়েকজন কমিশনার এমন অসৌজন্য কথাবার্তা  বলেছেন, অন্য সময় থাকলে তাদের কী পরিণতি হতো এ মূর্হুতে বুঝানো সম্ভব নয়। আমার দেশ-চ্যানেল ওয়ান-দিগমত্ম টিভি-ইসলামিক টিভি খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, একদিকে সরকার ভিন্নমতের পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে নতুন নতুন চ্যানেল দিচ্ছে, যাদের মালিকানা ক্ষমতদাসীন দলের লোকজনই। নতুন পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

কলামিস্ট ফরহাদ মজহার বলেন, গণতান্ত্রিক এই আন্দোলনে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ফ্যাসিস্টরাই  ক্ষমতা আখড়ে আছে। জনগনের গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা সব কিছুই শৃঙ্খলিত। তাই অনেকে বলে জনমানুষের আকাঙ্খায় আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন না করলে বিএনপি বিলিন হয়ে যেতে পারে। গণস্বাস্থ্যে প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাষ্টি ড. জাফরম্নলস্নাহ চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগের কি অবস্থা তা সবাই জানে। মানুষ ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। ন্যায় বিচারের কথা বললেও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে। এই অবস্থার উত্তরণে আন্দোলনের কৌশল অবশ্যই পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, আমরা বলতে চাই, বিএনপি জনগনের দল, জনগনের জন্য আন্দোলন করে। এই দল কখনো বিলিন হয়ে যাবে না। জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের পর বলা হয়েছিলো বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যাবে। এই এরশাদের নাটক আমরা দেখেছি। নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারকে অপসারণ করা হয়েছিলো। এরপর হাল ধরেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু বিএনপি এগিয়ে গেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে এ দল কখনো বিলিন হবে। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক রম্নহুল আমিন গাজী‘র সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করীম, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আ ন হ আখতার হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম এ আজিজ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।



মন্তব্য করুন