‘সরকারি নিরাপত্তা’ নেই খালেদার

সরকারি ‘নিরাপত্তা’ নেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। বেশ কিছুদিন ধরেই তার গুলশানের বাসা ও কার্যালয় থেকে পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) দুই সদস্যকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে। বেগম জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি। পুলিশ প্রটেকশন চেয়ে সরকারকে কয়েক দফা চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
দুই মাস লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার আগ মুহূর্তে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। একইভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছেও আবেদন করা হয়।

বিএনপির দাবি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো তাদের এ আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী (অব.) জানান, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি গুলশান কার্যালয়ে তিন মাস অবরুদ্ধ থাকার পরপরই বাসা থেকে পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হয়। এখনো পর্যন্ত বাসা ও কার্যালয়ের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা নেই। এ নিয়ে আমরা সরকারকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। সর্বশেষ বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো তারা এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানায়নি। এখনো আমরা সরকারের দিকেই তাকিয়ে আছি। আশা করছি, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি উপলব্ধি করে শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসা কিংবা গুলশানে তার কার্যালয়ে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি নেই। তবে বিএনপি প্রধানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে আমি কোনো আবেদন পাইনি।

গুলশান এভিনিউয়ে চেয়ারপারসনের ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মূল ফটকের বাইরে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত তিনজন নিরাপত্তা সদস্য (সিএসএফ) দায়িত্ব পালন করছেন। ফটকের ভিতরেও একাধিক সদস্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থাকার শেষ দিকে বাসার সামনে থেকে পুলিশ প্রটেকশন তুলে নেওয়া হয়। তিনি গুলশানের বাসভবনে ফিরলে সপ্তাহ খানেক পুলিশ প্রটেকশন ছিল। এরপর তাদের আর দেখা যায়নি। তারাই পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন।

সিএসএফ সদস্যরা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বাসা থেকে বেরোলে এক স্কট পুলিশ দেওয়া হয়। এর সঙ্গে দুজন এসবি সদস্যও থাকেন। এর আগে দুই স্কট পুলিশ দেওয়া হতো। সব মিলিয়ে পুলিশের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। এখন বাসা ও কার্যালয় থেকে পুলিশ পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে এক স্কট পুলিশও তুলে নেওয়া হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে আমরাও ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাছাড়া আমাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।

এদিকে গুলশান-২ এ চেয়ারপারসনের ৮৬ নম্বর রোডের কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, মূল ফটকের ভিতরে দুজন নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। বাইরে কোনো নিরাপত্তা কর্মীকে দেখা যায়নি। পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলা থেকে সম্ভাব্য মেয়রপ্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। পুলিশের কোনো সদস্যকে সেখানে দেখা যায়নি।
এর আগে কার্যালয়ের সামনে পুলিশের উপস্থিতি ছিল।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নেই পুলিশি নিরাপত্তা।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নেই পুলিশি নিরাপত্তা।

জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সদস্যের সংখ্যা ২৫ জন। এর মধ্যে সাতজন কর্মকর্তা। বাকিরা নিরাপত্তা সদস্য। এদের সবাই সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য। দায়িত্বপালনের সময় এরা সিএসএফ লেখা সংবলিত পোশাক পরিধান করে থাকেন। তারা লাইসেন্স করা অস্ত্রও বহন করেন। খালেদা জিয়ার বাসার সামনে পালাক্রমে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আট ঘণ্টা করে দিবারাত্রি তাদের গুলশানের বাসার সামনে থাকতে হয়।
খালেদা জিয়া বাসা থেকে বেরোলে আগে ও পরে বেশ কয়েকটি গাড়িতে তাদের স্কট থাকে।
গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনের পাশেই তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে। খাওয়া-দাওয়াসহ সেখানেই তারা রাত্রি যাপন করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সার্বিক নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তার প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর (অব.) বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের প্রধান। সরকারের পক্ষ থেকে তাকে স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তা দেওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনক হলো, চেয়ারপারসনের বাসা ও কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশি নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে সরকার। চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে আমরা ম্যাডামের নিরাপত্তা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। তবে এটা দিয়ে তো আর পুরো প্রটেকশন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করা হয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করছে বলে মনে হয় না।’



মন্তব্য চালু নেই