সম্পদের হিসাব দিলেন প্রিন্স মুসা

সম্পদ বিবরণী দাখিল করলেন আলোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান মুসা বিন শমসের (প্রিন্স মুসা)।

রোববার দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের সচিব বরাবর প্রিন্স মুসার এক প্রতিনিধির মাধ্যমে ওই সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। দুদকের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

এর আগে ১৯ মে তার গুলশানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাটকো’ বরাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক। দুদক প্রেরিত নোটিশে তাকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছিল।

তবে গত ২৪ মে সচিব বরাবর সাত কর্মদিবসের সময় চেয়ে আবেদন করেন প্রিন্স মুসা। সে হিসেবে আজ (৭ জুন) সর্বশেষ কর্মদিবস ছিল।

সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ‘সাত বিলিয়ন ডলার’ অর্থের অনুসন্ধানে নামে দুদক। তবে অনুসন্ধান পর্যায়ে মুসার আরও পাঁচ বিলিয়ন ডলারের তথ্য পায় কমিশন। অর্থাৎ প্রিন্স মুসার মোট ১২ বিলিয়ন ডলার সুইজ ব্যাংকে আটক রয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে)। যা নিয়ে মুসা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দুদককে জানিয়েছেন।

সুইজ ব্যাংকের একটি যৌথ অ্যাকাউন্টে মুসার অংশে আটককৃত অর্থের পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার। তবে আইনগত বাধা-নিষেধের অজুহাতে ওই যৌথ অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য দুদককে দেয়নি মুসা।

দুদকও পরবর্তী সময়ে যৌথ অ্যাকাউন্টের অংশীদারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। দুদককে মুসা জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের বিপরীতে ওই অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, মুসার ওই অর্থ ছাড়াও গাজীপুর ও সাভারে মুসার নামে বিভিন্ন দাগে প্রায় ১২শ’ বিঘা সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। খাতা-কলমে ওই জমির মালিক তিনি। ১৯৭২-৭৩ সালে এ সব সম্পত্তি ক্রয় করেছেন তিনি। এ সব সম্পত্তির বর্তমান মূল্য প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকার ওপরে (এক বিঘা এক কোটি টাকা হিসেবে)। অধিকাংশ সময় মুসা দেশের বাইরে থাকায় এ সব সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করে নামজারি করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে তিনি জমিগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই সময় বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ অনুসন্ধান শুরু করা হয়। তবে অজ্ঞাত কারণে দুদকের এ অনুসন্ধান আলোর মুখ দেখেনি। তিন বছর পর ২০১৪ সালের শেষের দিকে ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে আবারও নতুন করে মুসার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।

এরপর ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে কমিশন। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রিন্স মুসা দুদকের তিন ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জব্দকৃত অর্থের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন।

২০১১ সালের ২৪ জুন মুসার যাবতীয় ব্যাংক হিসাব তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুসার ব্যাংক হিসাব তলব করলেও রহস্যজনক কারণে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

২০১৪ সালে ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিন মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বাংলাদেশি এ ধনাঢ্য অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ৭ বিলিয়ন ডলার আটকে থাকার কথা বলা হয়েছিল।



মন্তব্য চালু নেই