সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহীর মোহনপুরের মৌগাছি উচ্চ বিদ্যালয়

সরকার দুলাল মাহবুব : নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থী থাকলেও নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। রয়েছে শ্রেণি কক্ষ সঙ্কট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও একাডেমিক ভবন সমস্যা। সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত ও ব্যক্তি মালিকানার পুকুরে জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

জরাজীর্ণ ভবন ও আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। বৃষ্টি আসলেই টিনের পানি শ্রেণিকক্ষে পড়ে। জানা গেছে, এ বিদ্যালয়ে মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক শাখা’য় প্রতিবছরে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভাল। সুদক্ষ শিক্ষক ও অভিজ্ঞপূর্ণ ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় শিক্ষা প্রসারে বিদ্যালয়টি এলাকায় বেশ পরিচিত।

বিদ্যালয়ে কর্মরত ১২শিক্ষক ১ জন ল্যাইব্রেরীয়ান ও ৪কর্মচারী দীর্ঘদিন যাবৎ ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে শাখা রয়েছে। বিদ্যালয়ে ৮টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। যার মধ্যে পাঁচকক্ষ বিশিষ্ট টিনসেট ভবন রয়েছে। টিনসেট কক্ষগুলোর মেঝে ফাটল ও টিনগুলো ফুটো হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে মেঝে ডুবে যায়। ফলে পাঠদান নানাভাবে বিঘিœত হয়।

বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি এবং কম্পিউটার ল্যাব নেই। নেই মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যিক শাখার আলাদাভাবে পাঠদান দেয়ার কক্ষ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশীরভাগই ছাত্রী। নেই কোন সীমানা প্রাচীর। আবার বিদ্যালয়ের মাঠের দৈর্ঘ্য বরাবরে ব্যক্তি মালিকানায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করায় পুকুরে হারিয়ে যাচ্ছে বেশকিছু জমি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, ১৯৯০ সালে স্থানীয়দের প্রচেষ্ঠায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৫ সালে এমপিওভূক্ত হয়। প্রথম থেকেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে শিক্ষার্থী প্রায় ৫শ’ জন। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে শাখা এবং মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে।

বিদ্যালয়ের এসএসসি’র পাশের হার বোর্ডের ওপরেই থাকে। ২০১৫ সলের জেএসসিতে শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। যার মধ্যে ১০ জন এ প্লাস পেয়েছে। তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ডিইও কর্তৃক শ্রণি শাখা বাতিল হয়েছে। যা বারবার আবেদন করেও পাচ্ছি না।

১৯৯৭ইং সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোন উন্নয়ন করা হয়নি। ফলে খোলা আকাশের নিচে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও বিদ্যালয়টি শতভাগ পাসের সাফল্যে অর্জন করেছে। তিনি জানান, শিক্ষার্থী অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষের চরম সংকটের ফলে ঝুঁকি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করতে হচ্ছে। একটি ভবন নির্মাণ করা খুব প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের টিনসেট কক্ষগুলো অর্থের অভাবে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যাগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের’কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর বাবুল জানান, বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানাগার ভবন নেই। নেই কম্পিউটার ল্যাব। বেঞ্চ-চেয়ার টেবিল ও ছেলেদের স্বাস্থ্যসম্মত কোন স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। তবুও শিক্ষার মান ভাল।

এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, আমি বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। সত্যিকার অর্থে নানা সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যায়লটি। শীঘ্রই বিদ্যালয়ের সমস্যা দুরীকরণে উদ্যোগ নেয়া হবে। আগামীতে অর্থ বছরে একাডেমিক ভবন নির্মানের প্রচেষ্টা চলছে।

তবে এতকিছুর পরেও আগামীতে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরীর নাম থাকলেও মৌগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম নেই। এ নিয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ’র চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, মৌগাছি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন গ্রামবাসী প্রায় আওয়ামী লীগ করে। এমনকি এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম এবং দুইজন মহিলা শিক্ষকসহ ৯ জন শিক্ষক আওয়ামীলীগের নৌকার অন্ধ সমর্থক। যে কারনে ২০০১ ইং সালের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি না নামানোর জন্য শিক্ষকদের লাঞ্চিত করেছিল। বিএনপি আসলে নেতৃবৃন্দ মনে করে ওই বিদ্যালয়ে কিছু দিয়ে লাভ নেই। আর আওয়ামী লীগ এলে নেতৃবৃন্দ মনে করেন ওই বিদ্যালয়টিতো আমাদেরই উন্নয়ন করা লাগবে না। অথচ বিদ্যালয়টির ভবনসহ উন্নয়ন খুবই জরুরী।



মন্তব্য চালু নেই