সব লাশের মাথায় আঘাত, হাত-পা বাঁধা

নারায়ণগঞ্জে কাউন্সিলর নজরুলসহ সাতজনকেই আঘাত করে মেরে ফেলা হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। হত্যার পর তাদের মুখমণ্ডলও বিকৃতি করে দেওয়া হয়েছিল।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন দুলাল চন্দ্র চৌধুরী জানান, বুধবার রাতেই নজরুল ইসলামসহ ছয়জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। বাকি একজনের হয়েছে বৃহস্পতিবার সকালে।

তিনি বলেন, লাশগুলো দেখে মনে হয়েছে প্রথমে মাথায় আঘাত করে পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিটি লাশের মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন। এটা শক্ত লাঠি বা লোহার বস্তুর আঘাত। প্রত্যেককে একই ধরনের আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিটি লাশের হাত-পা শক্ত রশি দিয়ে মজবুত করে বাঁধা ছিল। গলায় রশি প্যাঁচানোর চিহ্ন রয়েছে। প্রতিটি লাশের পেটে, বিশেষ করে নাভিতে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশগুলো বিকৃত করে ফেলা হয়েছিল।

সিভিল সার্জন বলেন, লাশগুলোর অবস্থা দেখে মনে হয়েছে উদ্ধারের আগে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের হত্যা করা হয়েছে। একটি লাশের মাথায় পলিথিন জড়ানো ছিল।

এদিকে, নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মইনুর রহমান জানান, নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে বৃহস্পতিবারও কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে ডেমরা সড়ক ব্যবহার করে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মহাসড়কের সাইনবোর্ডের আগে ও কাঁচপুরের আগে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অনেক পথচারীকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েনের পর মহাসড়কে তাদের টহল দিতে দেখা গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন বা কোনো হত্যাকারীকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় জানাজা বৃহস্পতিবার  বেলা ১১টায় সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে নজরুলের বন্ধু তাজুল ইসলামের জানাজা হয়। জানাজা শেষে সিদ্ধিরগঞ্জের নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে নজরুলকে দাফন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জ থেকে গত রোববার একসঙ্গে সাত ব্যক্তি অপহৃত হন। তারা হলেন : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ইব্রাহিম।

বুধবার দুপুরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন নজরুল, চন্দন কুমার, মনিরুজ্জামান, তাজুল ও ইব্রাহিম। বৃহস্পতিবার নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের লাশটি পাওয়া গেছে। লাশগুলো এতটাই বিকৃত ছিল যে, শেষ পর্যন্ত লাশের পরনের কাপড়, হাতের আঙটি, কোমরের বেল্ট-এসব দেখে তাদের শনাক্ত করেছেন স্বজনরা।

 



মন্তব্য চালু নেই