তিনি সবচেয়ে নিঃসঙ্গ তিমি !

প্রাণীবিদেরা এই তিমির নাম দিয়েছেন ‘পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ তিমি’। অন্য সব তিমির মতো এই তিমি গান গায় না। একাকী প্রশান্ত মহাসাগরের দীর্ঘ সীমানায় ঘুরে বেড়ানো তিমিটিকে দীর্ঘদিন কোনো সঙ্গীর সঙ্গে দেখা যায়নি। তিমিরা যেমন দলবদ্ধ হওয়ার জন্য বিশেষ গান গায়, এই তিমিটি তাও করে না। উল্টো নিঃসঙ্গতায় ভর করে কান্নাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাচ্ছে সে। কোথায় তার ঠিকানা, কোথায় গেলেই বা তাকে পাওয়া যাবে, তা কেউ জানে না।

সর্বশেষ ২০০৪ সালে সেই নিঃসঙ্গ তিমিটিকে দেখা গিয়েছিল। এরপর এতগুলো বছর অনেক খুঁজেও তার দেখা পাননি প্রাণীবিদেরা। কেউ জানে না ওই তিমিটি পুরুষ না নারী। এমনকি ওই তিমিটি কোন প্রজাতির তাও জানা নেই কারও। শুধু তাই নয়, তিমিটি আদৌ বেঁচে আছে কিনা তাও জানা যায়নি। প্রাণী জগতের অনেক অমীমাংসিত রহস্যের মধ্যে এটা অন্যতম।

বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এতোদিন তারা যে উপায়ে ওই তিমিটির খোঁজ চালাচ্ছেন তা হয়তো সঠিক নয়। কারণ তিমিদের খোঁজার অন্যতম উপাদান হলো তাদের সঙ্গীত। তিমিরা সচরাচর তাদের বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষিত করার জন্য এক প্রকার সঙ্গীতের ভেতর দিয়ে যায়, যা কেবল তিমিদের পক্ষেই বোঝা সম্ভব। কিন্তু আমাদের রহস্যঘেরা এই তিমি অন্য সব তিমির মতো সঙ্গীত রচনা না করলেও তার রয়েছে শব্দ উৎপাদনের ক্ষমতা এবং ভাগ্যক্রমে সেই শব্দ প্রাণীবিজ্ঞানীদের কাছে সংরক্ষিত আছে। হয়তো নিঃসঙ্গ এই তিমি তার নিজস্ব সঙ্গীত দিয়ে ভিন্ন কিছু বলতে চাইছে বা বোঝাতে চাইছে যা আমরা বুঝতেও পারছি না।

সময়টা ১৯৮৯ সাল। মার্কিন নৌবাহিনীর একটি দল সমুদ্রে হাইড্রোফোন মারফত কিছু অদ্ভুত শব্দ ধারণ করতে সক্ষম হয়। সেই শব্দগুলো ছিল আদতে তিমি সঙ্গীত। কিন্তু অন্যান্য তিমি সঙ্গীতের তুলনায় এই সঙ্গীতের বেশ কিছু পার্থক্য ছিল। তিমি সচরাচর ৫২ হার্টজে শব্দ উৎপাদন করে না, যা মানুষের পক্ষে শোনা সম্ভব নয়। কিন্তু আলোচ্য তিমিটি ১০ থেকে ৪০ হার্টজের মধ্যে শব্দ উৎপাদন করে। ফিন তিমি মাছেরাও এই হার্টজে শব্দ উৎপাদন করলেও তাদের শুরু হয় ২০ হার্টজ থেকে। আর এই পার্থক্যটি সবার আগে ধরতে পারেন তিমি গবেষক বিল ওয়াটকিনস। অবশ্য এই বিজ্ঞানী ২০০৪ সালে ৭৮ বছর বয়সে মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে তিনি তার গবেষণার সারবস্তু লিখিত রেখে যান। আর সেই লিখিত তথ্য থেকে জানা যায়, ৫২ হার্টজ শব্দ উৎপাদনকারী তিমি সাধারণ কোনো তিমির মতো নয়, বরংচ তিমি সাদৃশ ভিন্ন কিছু।

ওয়াটকিনস আরও লিখেছিলেন, ‘সম্ভবত এটা মেনে নেয়া খুব কঠিন হবে যে, ওটা যদি তিমি না হয়ে থাকে তবে বিশাল মহাসাগরের বুকে ওটাই একমাত্র অতিকায় প্রাণী যা একাই জীবিত আছে। বছর ব্যাপী কঠোর মনিটরিংয়ের ভেতর দিয়ে মাত্র একবার ওই প্রাণীর কাছাকাছি যেতে পেরেছিলাম।’



মন্তব্য চালু নেই