সন্ত্রাসী হামলা নয়, গুলশানের ভবনে ‘চোরের হানা’

গুলশানের একটি বাণিজ্যিক ভবনে সন্দেহভাজনদের ঢুকে পড়া নিয়ে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় তোলপাড় হলেও পরে জানা গেছে, ওটা ছিল একটা চুরির ঘটনা। গুলশান এক নম্বর গোল চত্বরের ৫১ নম্বর ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান লুট করেছে দুর্বৃত্তরা।

গুলশান ১ নম্বর গোল চত্ত্বরের ৫১ নম্বর ভবনটির নিচতলায় ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান এলজির শো রুম ছাড়াও বেসরকারি ব্যাংক এনসিসির শাখা হয়েছে।

সকাল সকাল ভবনে সন্দেহভাজনদের ঢুকে পড়ার খবর পাওয়ার পর পর উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। ওই ভবন থেকে সন্দেহভাজনদের ফেলে যাওয়া দুটি ব্যাগ পাওয়ার খবর এই উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয় আরও। এতে বিস্ফোরক আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ডেকে পাঠানো হয় পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। তবে পরে এতে কিছু পাওয়া যায়নি, ১৭টি মোবাইল ফোন আর কিছু যন্ত্রপাতি উদ্ধার হয় এই ব্যাগ দুটি থেকে। এই ঘটনায় ওই ভবনে হানা দেয়া সবাই পালিয়ে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির গুলশান অঞ্চলের একজন অতিরিক্ত উপকমিশনার নিজের নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এটি একটি সিঁধেল চুরির ঘটনা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে স্যারদের সঙ্গে কথা বলুন।’

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার ইউসুফ আলী বলেন, ‘এই চুরির ঘটনায় আমরা চার জনকে আটক করেছিলাম। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদের পর সবাইকে ছেড়ে দিয়েছি।’

যেভাবে জানা যায় ঘটনাটি

পুলিশ জানায়, ওই ভবনের পাশেই বেসরকারি ব্যাংক ব্র্যাকের একটি বুথ ছিল। ওই বুথের নিরাপত্তাকর্মী ভোর পৌনে সাতটার দিকে ওই ভবনের নীচতলায় ভেতর থেকে একজনকে গ্রিল কাটার চেষ্টা করতে দেখেন। পরে সবুর তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করলে ওই ব্যক্তি ও তার তিন সহযোগী ওপরের দিকে চলে যায়।

সবুর বিষয়টি সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরকে জানালে সকাল পৌনে নয়টার দিকে পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য আসে ঘটনাস্থলে। আসে সাঁজোয়া বহরও। পরে পুলিশের তল্লাশি দল ভবনটিতে অভিযান চালায়। তার আগেই পালিয়ে যায় সন্দেহভাজনরা।

পরে পুলিশ তল্লাশি করে দেখতে পায় ছয় তলার একটি জানলার গ্রিল কেটে চোরের দল ওই ভবনে ঢুকেছিল। নিচতলা দিয়ে বের হতে না পেরে ওই পথ দিয়েই পালিয়ে যায় তারা।

ভবনে সন্দেহভাজনদের প্রবেশের খবরে পুলিশের পাশাপাশি ওই এলাকায় অবস্থান নেয় র‌্যাব সদস্যরাও। র‌্যাব-১ এর উপঅধিনায়ক শফিউল আজম জানান, ওই ভবনে রয়েল সিকিউরিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে তিন থেকে চার লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

গুলশানে আতঙ্ক এবং পরে স্বস্তির নিঃশ্বাস

গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা করে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার দুই মাসের ব্যবধানে আবারও একটি ভবনে সন্দেহভাজনদের প্রবেশের খবর পেয়ে আশেপাশে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। আসে সাঁজোয়া গাড়িও। আবারও কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলো কি না, এই ভেবে তৈরি হয় আতঙ্ক।

আর্টিজান হামলার পর পর ওই এলাকার নিরাপত্তায় জোরদার করার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই এলাকায় বাইরের বাস ও রিকশার প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই এলাকার পরিবহনের জন্য দেয়া হয়েছে আলাদা বাস ও রিকশা। বাইরের গাড়ি প্রবেশ করতে গেলেই পড়তে হয় কড়া তল্লাশির মধ্যে।

সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে চোরের দলের হানা স্বভাবতই পুলিশের কড়া নিরাপত্তার আয়োজনকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই