সন্তানের জঙ্গিযোগ ঠেকাতে পাসপোর্ট-দাওয়াই ব্রিটেনের

ছেলেমেয়েদের নজরে রাখা তো বটেই, প্রয়োজনে ছিনিয়ে নেওয়া হোক তাদের পাসপোর্টও। দেশ থেকে পালিয়ে সিরিয়া কিংবা ইরাকে আইএস-এ যোগ দেওয়া থেকে সন্তানদের আটকাতে ব্রিটিশ অভিভাবকদের জন্য এমনটাই দাওয়াই প্রশাসনের। আইএস নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন আবার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একই রকম সজাগ থাকার বার্তা দিলেন দেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে।

আইএসে নাম লেখাতে দেশ ছাড়ার ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে ব্রিটিশ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। উদ্বিগ্ন প্রশাসন। গত ডিসেম্বরে এক কিশোরীকে হিথরো থেকে আটক করে শেষমেশ ঘরে ফেরানো গেলেও, ফের উধাও আরও তিন। লন্ডন পুলিশ সূত্রের খবর, ১৭ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গেই বাড়ি থেকে পালায় বেথনাল গ্রিন অ্যাকাডেমির তিন ছাত্রী শামিমা বেগম (১৫), কাদিজ়া সুলতানা (১৬) এবং আমিরা আবাস (১৫)। পলাতক তিন জনের মধ্যে দু’জনের মাতৃভাষা বাংলা বলেও জানা গিয়েছে। প্রশাসন এক রকম ধরেই নিয়েছে, আইএস-এ যোগ দিতেই ভায়া ইস্তানবুল সিরিয়ায় পালিয়েছে এই তিন কিশোরী। ঘটনার পর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনও খোঁজ নেই তাদের। তিুর্ক পুলিশের সঙ্গে ইস্তানবুলে যৌথ  অভিযান চালাচ্ছে লন্ডন পুলিশের সন্ত্রাস-দমন শাখা।

আজ পরিবারের তরফে ঘরে ফিরে আসার আর্তিও জানানো হয়েছে কাদিজ়াদের। শামিমার উদ্দেশে তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আমরা সত্যিই তোমায় খুব ভালবাসি। জানি, সিরিয়ায় যাঁরা কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁদের জন্য তুমি কষ্ট পাও। কিন্তু তুমি তো বাড়ি থেকেও ওদের সাহায্য করতে পারো। আর যা-ই করো, সীমান্ত পেরিয়ো না। তোমার মা অসুস্থ, ঘরে ফিরে এসো।” স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ।

কাউকে কিছু না জানিয়ে তিন কিশোরীর এ ভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়াটা অবশ্য আগেই আশঙ্কা করেছিল প্রশাসন। পুলিশ জানিয়েছে, ডিসেম্বরে যে কিশোরী সিরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়, এই তিন জনই তার বন্ধু ছিল। অনলাইনে জঙ্গিদের তরফে এদের জেহাদি ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করাও হচ্ছিল বলে দাবি পুলিশের। সেই কারণেই মাস দুয়েক আগে এই তিন কিশোরীকে আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। আগাম সতর্কতা সত্ত্বেও কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ভবিষ্যতে ব্রিটেনের অন্য কোনও পরিবারেও যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, তা-ই সন্তানের পাসপোর্ট সরিয়ে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে প্রশাসন।

স্কুলপড়ুয়া, বিশেষত কিশোরীদের মগজধোলাই করে যে ভাবে ‘জেহাদ’-এর স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, এ দিন তার বিরোধিতা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের কথাতেও। নিখোঁজ তিন কিশোরীকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও প্রশাসনের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতের নাগরিকরা যাতে বিপথে চালিত না হয়, তা দেখার দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে সমাজের প্রতিটি অংশকেই।”

ইতিমধ্যে তুরস্কের গোয়েন্দা সূত্রে অবশ্য কিছুটা হদিস মিলেছে তিন কিশোরীর। ব্রিটিশ এক সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, গত শুক্রবার তিন জনকেই নাকি একই সঙ্গে সিরিয়ার শহর তাল আবিয়াদে দেখা গিয়েছে, সঙ্গে এক সিরীয় পুরুষ। এদের প্রত্যেকেই এখন সিরিয়ার পরিচয়পত্র বহন করছে বলেই দাবি গোয়েন্দাদের।

 



মন্তব্য চালু নেই