সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে ড.কামাল

সংবিধান সংশোধনীর আগে জনমত নিতে হবে

ষোড়শ সংশোধনী যেভাবে তড়িঘড়ি করে করা হচ্ছে এভাবে কোনো সংশোধনী মোটেই জনস্বার্থের জন্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ আইনজীবী ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য নিয়োগ পদ্ধতি থাকা দরকার ছিল। সরকার সেটা না করে বিচারকদের সরানোর জন্য কেন আইন করছে সেটা আমাদের
অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে।’

তিনি অভিশংসনের মতো গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের আগে ব্যাপকভাবে জনমত যাচাই করার পরামর্শ দেন।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ আয়োজিত ‘সংবিধান সংশোধন, বিচারপতিদের অভিশংসন এবং তার তাৎপর্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. কামাল বলেন, ‘সংবিধানের এ ধরনের সংশোধনীর ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে জনমত যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। শুধু বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষেত্রেই নয়। অন্য সকল ক্ষেত্রেও আমাদের ব্যাপক জনমত যাচাই করা দরকার।’

প্রবীণ এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিচারপতিদের অভিশংসনের এই ধারার সংশোধনীর ক্ষেত্রে অবশ্যই জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন। সেটা শুধু রাজধানীতেই নয়। জেলায় জেলায় সংলাপের মাধ্যম্যে জনমত যাচাই করতে হবে। আসলেই জনগণ এই সংশোধন চায় কি না সেটা দেখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিসভা বলে দিল আর আমরা কালই সেটা পাশ করে দিলাম, আমরা এ ধরনের চারদিনের সংবিধান সংশোধন চাই না। অনেক সময় নিয়ে জনমত যাচাই করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

ড. কামাল বলেন, ‘কোনো দেশের কনসুলেশনকে মডেল হিসেবে নিয়ে হুবহু অনুকরণ করা ঠিক না। দেশের সংসদ বা সংবিধানের ক্ষেত্রে আমরা শিশু হলেও কিন্তু ৪৪ বছরের শিশু। আমাদের নিজস্ব পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সংসদ কি কার্যকর হচ্ছে নাকি দলীয়ভাবে কাজ করছে, বিবেকের ভিত্তিতে সত্যের পক্ষে কথা বলছে কিনা সেটা আমাদের দেখতে হবে। যেসব দেশে অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে আছে সেখানে দলীয়ভাবে বিবেচনা করা হয় না। সবকিছুই নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করা হয়। কোনো বিচারকের অন্য দলের প্রতি আনুগত্য আছে বলে তাকে আমরা ঘায়েল করবো, এটা করা ঠিক হবে না।’

সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শুধু বিচারকদের অপসারণের বিধান হচ্ছে না। এর মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে নিযুক্ত ব্যক্তিদের অপসারণের ক্ষেত্রেও উচ্চ আদলতের বিচারকদের অপসারণের পদ্ধতিই প্রযোজ্য।’

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো ষোড়শ সংশোধনীতে শুধু বিচারকদের অভিশংসন কেন? অন্য কোনো বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি কেন? যদি এই সংশোধনী হয়ে যায় তবে আওয়ামী লীগের আমলে যে সকল বিচারক নিয়োগ পাবে, বিএনপি কখনো ক্ষমতা পেলে পালাক্রমে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এই বিচারকদের গণহারে অভিশংসন করবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার একটি উদাহরণ দেয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে সংসদের হাতে আছে সেভাবে আমাদের হাতে থাকবে। আমি বলব, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কি আমাদের মতো গৃহপালিত বিরোধী দল আছে? এরকম অবৈধ ও বিনা ভোটে এতগুলো সংসদ সদস্য নির্বাচচিত হয়েছে? এতসবকিছু বাদ দিয়ে যদি শুধু একটি মিলের দিকে তাকিয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয় তবে দেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠার যে ব্যাপক প্রচারণা দেখতে পাচ্ছি এটা কার্যকর হবে।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান, সুজনের চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই