সংঘাত-সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে মোল্লাকান্দি

নাসরিন আক্তার, মুন্সীগঞ্জ থেকে : সন্ত্রাসের জনপদ মুন্সীগঞ্জ সদরের চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে। ব্যাপক রক্তপাতের আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর দুই পক্ষের লোকজনই সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে নৌকার প্রার্থীসহ তার সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় নৌকার প্রার্থী হাজী রিপন হোসেন পাটোয়ারি, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রসহ দলীয় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের ব্যবহ্নত দুইটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর ও একটি মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আবার একই সময় বিদ্রোহী প্রার্থী মহাসিনা হক কল্পনার নির্বাচনী ক্যাম্প ও ক্যাম্পের চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে।

গত ১৮ই মে রাত ৭টায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মাকহাটি বাজারে ঘটে এ ঘটনা। ঘটনার জন্য নৌকার প্রার্থী ও আনারস প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থী পরস্পরকে দোষারূপ করেছেন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর দুই পক্ষই সদর থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে, নির্বাচন সামনে রখে ব্যাপক অস্ত্র, বোমা ও ককটেল মজুদ হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গত ১৪ ই মে দিনগত রাতে ইউনিয়নের আমঘাটা গ্রাম থেকে জয়নাল খা’র দোচালা টিনসেেেটর ঘরে তিনটি প্লাষ্টিকের বালতির মধ্যে ৫৮টি তাজা ককটেলসহ মামুন (২৮) নামে এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পর মোল্লাকান্দিতে আতঙ্ক উত্তেজনা বেড়ে যায়।

নৌকার প্রার্থী রিপন পাটোয়ারি জানান, আনারস প্রতীক প্রার্থীর সমর্থকরা এলাকায় ব্যাপক তান্ডব শুরু করেছে। তারা ইউনিয়নের উত্তর বেহেরকান্দিতে রতন দেওয়ান ও রাজারচরে মিল্লাদ বেপারীকে কুপিয়ে আহত করে। উঠোক বৈঠকের খবরে আগের দিনই নৌকার সমর্থকদের গ্রাম ছাড়া ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে মসজিদে, কবরস্থানে আমরা শপথ নিয়েছিলাম, নৌকার টিকিট যে পাবে তার নির্বাচন করবো। এখন তারা কি করছেন। হজ্বের কসম দিয়ে তিনি বলেন, আমি একটি টাকার বিনিময়েও নৌকার টিকিট নেইনি। অথচ তারা কুৎসা রটাচ্ছেন আমি নাকি বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে নৌকার মনোনয়ন নিয়েছি। বৃহস্পতিবার উঠোক বৈঠক শেষে ফেরার পথে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালায়, গাড়ি ভাঙচুর ও মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। নিজেরাই তাদের ক্যাম্প ভাঙচুর করে দোষ আমার ওপর চাপাতে চাইছেন।

ইউসুফ ফকির নামে এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে নিয়ে তারা অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে। এই ইউসুফ ফকিরের বিরুদ্ধেই কিছুদিন আগেও তারা ছিলো। ইউসুফ ফকির চেয়ারম্যান প্রার্থী কল্পনার বাবা আবু বকর মোল্লা, মামা আওয়ামী লীগ নেতা শাহআলম মল্লিককে মারধর করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ৫ বছর ধরে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানে দায়িত্বে আছি, এ সময়ে এলাকায় আমি কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, জুলুম নির্যাতন করিনি, সরকারি টাকা মেরে খাইনি। নিজের টাকাও এলাকার উন্নয়ন করেছি। কিন্তু তারা মরিয়া হয়ে ওঠেছে চেয়ারম্যান তাদের হতেই হবে, না হতে পারলে তাদের সম্মান থাকবে না। তারা আসলে কি চায়, আমি জানতে চাই। এলাকায় রক্তের হোলিখেলা আর কতো খেলবে।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহাসিনা হক কল্পনা বলেন, মোল্লাকান্দিতে লাখ লাখ টাকার অবৈধ অস্ত্র, বোমা, ককটেল বানানো ও সংগ্রহ করা হচ্ছে। নৌকার প্রার্থী রিপন পাটোয়ারি ও তার ভাই সিপন পাটোয়ারি নেতৃত্বে আমঘাটা, নতুন আমঘাটা ও চরডুমুরিয়া এলাকায় বোমা ও ককটেলের ভয়ে শত শত লোক গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ভয়ে আমিও গণসংযোগে যেতে পারছি না। এখানে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের নেতৃত্বে মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে বহিরাগতদের সশস্ত্র মহড়া চলছে। আমার নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুরসহ সমর্থকদের হুমকি, বাড়ি ছাড়া করা হচ্ছে। বহিরাগতদের মহড়া বন্ধ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভবপর নয় বলে তিনি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ মে মোল্লাকান্দিসহ সদরের ৬ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



মন্তব্য চালু নেই