সংঘাতের শঙ্কা নিয়েই কাল ইউপি ভোট

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতের কথা নিয়ে রোজ খবর বেরুচ্ছে। সংঘাত সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন অনেকটাই বেসামাল। ইউনিয়নের নির্বাচনী বাতাস যখন থেকে বইছে, তখন থেকেই সহিংসতার আগুনে পুড়ছে দেশ। এসব সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহতও হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েশ নেতাকর্মী।

গত রোববার রাতেও বান্দরবানে রুমা উপজেলায় শান্তি ত্রিপুরা নামে এক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

সংঘাত-সহিংসতার এমন দগদগে আগুন নিয়েই মঙ্গলবার শুরু হতে যাচ্ছে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ছয় পর্বের এই নির্বাচনে ৭৩৯টি ইউনিয়নে মঙ্গলবার প্রথম দফার ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ইতোমধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী এলাকায় সকল ধরণের প্রচারণা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সকল প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন। যেসব জেলায় নির্বাচন হচ্ছে, সেসব জেলায় বিজিবিও টহল দিতে শুরু করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে। সংঘাত এড়াতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকেও নানা নির্দেশনা এবং সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।

তবুও যেন শঙ্কা কাটছে না নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের। দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করলেও ভোটারদের মাঝে রয়েছে চাপা শঙ্কা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, সহিংসতার আশংকাও ততো বাড়ছে। কি হবে মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্রে, সাধারণ ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে তো, প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে তো, সংঘাত এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারবে কিনা-এমন সব প্রশ্নে ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় ৭৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিন শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে শতাধিক প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলেও মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুই শতাধিক বিদ্রোহী। মূলত সংঘাতের আশঙ্কা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীর।

এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে, তার বেশির ভাগই জন্ম দিয়েছে সরকারি দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা এসব সহিংসতার শিকার হলেও অধিকাংশ জায়গাতেই জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এবং তাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরেই হামলা করা হচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসনের নীরব সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী বিধির কোনো তোয়াক্কাই করছেন না নৌকার প্রার্থীরা। ‘নৌকা প্রতীক মানেই নিশ্চিত বিজয়’ এমন ধারণা পোষণ করে মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে মরিয়া তারা।

বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না। প্রচার-প্রচারণায় সর্বত্রই বাধার সম্মুখিন হচ্ছেন বিরোধী পক্ষের প্রার্থীরা। থানা-পুলিশ বা স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়ে নালিশ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ, ভয়ভীতি দেখানোসহ অনেককেই ঘরবাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেও কোনো প্রকার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সহিংসতার সকল প্রস্তুতি সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগই নিয়ে রেখেছে।’

তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহিংসতা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো সেইভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। পরর্বর্তী নির্বাচনগুলো অনেকটাই গোছালো হবে বলে মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে সহিংসতা পুরানো। তবে যে কোনো সময়ের চেয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় সহিংসতা কমে আসছে। যা ঘটছে, তা বিচ্ছিন্ন।’



মন্তব্য চালু নেই