সংকটে চীনের শেয়ারবাজার

গভীর সংকটের মুখে পড়েছে চীনের শেয়ারবাজার। বাজারে পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলো কোন কাজে আসছে না। উদ্যোগগুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতংকের মাত্রা কয়েকগুন বেড়ে গেছে। এ কারণে বাজারে বিক্রয় চাপ ঠেকানো যাচ্ছে না। আরও বড় ধরনের লোকসান ঠেকাতে সস্তা দরে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

বুধবার দিনের শুরুতে সাংহাই কম্পজিট ইনডেক্সের পতন হয়েছে ৮.২ শতাংশ। অবশ্য এরপর বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ৫.৯ শতাংশ পতন দিয়ে শেষ হয়েছে দিনের লেনদেন। অপরদিকে হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের হ্যাং চ্যাং সূচকের পতন হেয়েছে ৫.৮ শতাংশ।

স্বস্তা দরে শেয়ার বিক্রির কারণে বুধবারকে ‘কালো বুধবার’ বলে মন্তব্য করেছেন আইজি’র প্রধান বাজার কৌশলী ক্রিস ওয়েস্টন।

এদিকে পতন অব্যাহত থাকায় শেয়ারের দর ধরে রাখতে শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি। নতুন করে ৫০০ কোম্পানি তাদের শেয়ার বিক্রি বন্ধ রাখর ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে ১৩০০ কোম্পানি তাদের শেয়ার বিক্রি বন্ধ করেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রায় অর্ধেক কোম্পানির শেয়ার বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

বাজারের এ পরিস্থিতিতে ‘দি চায়না ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরী কমিশন (সিআইআরসি)’ প্রধান প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন বাজারে সত্যিকার অর্থেই আতংক তৈরী হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যখন বাজারের ৯০ শতাংশ লেনদেন বন্ধ হয়ে যায় তখন কোন কিছুই স্বাভাবিক থাকে না।

গত জুনের মাঝামাঝি থেকে চীনের শেয়ারবাজারে পতন অব্যাহত রযেছে। এর ফলে দেশটির প্রধান বাজারের সূচকের পতন হয়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশী। বাজারে অস্বাভাবিক পতনের কারণ খুঁজতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

তবে পতন রোধে চীনের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বাজারে বড় ধরনের বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়।তাদের এ ঘোষণার কারণে গত সোমবার বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। সূচকের বৃদ্ধি ঘটে ৮ শতাংশ। কিন্তু তারপর থেকে ফের পতন শুরু হয়েছে বাজারে।

পতন ঠেকাতে চীনা নিয়ন্ত্রক সংস্থাসমুহ আতংক কমানোর জন্য বাজার সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছে। চীনের বৃহৎ রাষ্ট্রয়াত্ত্ব কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘দি ক্যাবিনেট এজেন্সি’ কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ক্রয়ের কিন্তু কোন শেয়ার বিক্রি না করার আহবান জানিয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।

বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিআইআরসি মার্জিন লোন অর্থায়নকারী রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে পর্যাপ্ত অর্থ যোগান দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। চীনের বিনিয়োগিকারীরা শেযারবাজারে বিনিয়োগে মার্জিন লোনের উপর অনেক বেশী নির্ভরশীল।

এদিকে বীমা গ্রাহকদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগসীমা বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ব্লু চীপস কোম্পানিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সম্পদের ১০ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আগে এ সীমা ছিল ৫ শতাংশ। অর্থাৎ বীমা গ্রাহকদের বিনিয়োগের সীমা ১০০ % বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগ নেওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতংক তৈরী হয়েছে। আবার এসব উদ্যোগ কাজে না লাগায় আতংকের মাত্রা আরও বহুগুণে বেড়ে গেছে। সূত্র-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই