শ্যামা সুন্দরীর কথা

সময়টা ২০০৮ সাল। তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়তাম। তখনেই দেখা হয় শ্যামা সুন্দরীর সাথে। রংপুর মহানগরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া প্রায় ১২২ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খাল।

১৮৯০ সালে তৎকালীন ডিমলার দানশীল রাজা জানকী বল্লভ সেন তাঁর মা ‘শ্যামাসুন্দরী’র স্মরণে এ খাল খনন করেছিলেন। শ্যামাসুন্দরীর মতো একটি খাল কেবল রংপুরই নয়, বাংলাদেশেই বিরল। ১৬ কিমি দীর্ঘ এবং স্থানভেদে ৪০ থেকে ১২০ ফুট প্রশস্ত এই খাল পৌর এলাকার উত্তর পশ্চিমে কেল্লাবন্দস্থ ঘাঘট নদী থেকে শুরু হয়ে নগরীর সব পাড়া-মহল্লার বুক চিরে ধাপ পাশারি পাড়া, কেরানী পাড়া, মুন্সী পাড়া, ইঞ্জিনিয়ার পাড়া, গোমস্তা পাড়া, সেন পাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, নূরপুর, বৈরাগিপাড়া হয়ে মাহীগঞ্জের কেডি ক্যানেল স্পর্শ করে মিশেছে খোকসা ঘাঘট নদীতে।

জানা যায়, সে সময় এ অঞ্চল জুড়ে পয় নিষ্কাশনের তেমন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে ম্যালেরিয়াবাহী মশার উপদ্রব ছিল খুব বেশি। সেই মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েই সে সময় মৃত্যুবরণ করেছিলেন রাজমাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী।

পরে মাতৃ শোকে বিহ্বল রাজা জানকী বল্লভ এই মরণব্যাধীর হাত থেকে এ অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করতে জলাবদ্ধতা আর ম্যালেরিয়া দূর করার জন্যই মায়ের স্মরণে এ খাল খননের উদ্যোগ নেন। খালের নামকরণ করা হয় ‘শ্যামাসুন্দরী খাল’। খাল খননের জন্য রংপুর পৌরসভা ও জেলা বোর্ডের যৌথ প্রচেষ্টায় ফ্রান্সিস হেনরি স্ক্রাইন সাহেবকে সভাপতি করে গঠিত হয় খাল খনন কমিটি।

খনন শেষে ১৮৯০ সালে অবিভক্ত বাংলার তদানীন্তন লেঃ গভর্নর অনারেবল স্যার স্টুয়ার্ট কেলভিন বেইলী শ্যামা সুন্দরী খালের উদ্বোধন করেন। কেরামতিয়া মসজিদ ও জজকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় সে সময় গড়ে তোলা এ খালের স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভে লেখা রয়েছে – ‘‘পীড়ার আঁকর ভূমি এই রঙ্গপুর প্রণালী কাটিয়া তাহা করিবারে দূর মাতা শ্যামাসুন্দরীর স্মরণের তরে জানকী বল্লভ সুত এই কীর্তি করে।’’ কিন্তু যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আজ থেকে ১২২ বছর আগে খালটি খনন করেছিলেন রাজা জানকী বল্লভ সেন, কালের বিবর্তনে সেই উদ্দেশ্য বিলীন হয়ে গেছে।

স্কুলে পড়ার সময় শুনেছিলাম এই শ্যামাসুন্দরীর বুকে নাকি ময়ূরপঙ্খী নাও চলতো। কথার সত্যতা কখনও পরখ করি নি। ঐতিহ্যভরা এ শ্যামাসুন্দরী বাঁচলে অনেক কিছুই বেঁচে থাকবে। বেঁচে থাকবে শ্যামাসুন্দরীর দু’পাড়ের কৃষি। বেঁচে থাকবে রাজা জানকীর স্বপ্ন।

লেখক:
আল-আমীন আপেল
শিক্ষার্থী,
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর



মন্তব্য চালু নেই