শোলাকিয়ায় যেভাবে হামলা হয়েছিল (সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেুখন)

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বৃহস্পতিবারের জঙ্গি ও পুলিশের মধ্যেকার গোলাগুলির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মোরসেদ জামান বলেন, ‘ওয়াকিটকিতে শুনতে পেলাম, “আমরা আক্রমণের শিকার হয়েছি, তাড়াতাড়ি আসো।” কিন্তু কোথায় আক্রমণের শিকার হয়েছে, তা তারা (পুলিশ) বলতে পারছিল না। পরে জানা যায়, শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে আজিমউদ্দীন স্কুলের সামনের এলাকায়।’

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে আজিমউদ্দীন স্কুলসংলগ্ন এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ চারজন নিহত হন। আহত হয়েছেন প্রায় ১২ জন।গতকালের হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন মো. মোরসেদ জামান। তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও জঙ্গিদের মধ্যে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে গুলিবিনিময় হয়েছিল। গোলাগুলির একপর্যায়ে পিস্তলের চেম্বার জ্যাম (দুটো গুলি একসঙ্গে আটকে যায়) হয়ে গেলে আবির রহমান আর গুলি ছুড়তে পারছিল না। তখন সে চাপাতি নিয়ে দৌড় দেয়। পরে পুলিশের গুলিতে আবিরের মৃত্যু হয়।’

গতকালকের ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মো. মোরসেদ জামান বলেন, ‘ওয়াকিটকিতে শুনতে পেলাম, “আমরা আক্রমণের শিকার হয়েছি, তাড়াতাড়ি আসো।” কিন্তু কোথায় শিকার হয়েছে, তা তারা বলতে পারছিল না। পরে জানা যায় এটা আজিমউদ্দীন স্কুলের সামনের এলাকায়। তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ এবং আরও তিনজন হাবিলদার তিনটি চায়না রাইফেল নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের দেখে জঙ্গিরা সমানে গুলি ছুড়তে শুরু করে। পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদের (মুফতি মোহাম্মদ আলী মসজিদ) অজুখানার পেছনে দাঁড়িয়ে আমরা জঙ্গিদের থেকে আড়াল হই। কিছুক্ষণ পর আরও পুলিশ সদস্য আমাদের সঙ্গে যোগ দেন। জঙ্গিরা তখন পিছু হঠতে বাধ্য হয়ে একটি গলিতে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেও তারা বারবার গুলি ছুড়ছিল।’

মো. মোরসেদ জামান বলেন, ‘পুলিশ অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। পুলিশ ধারণা করতে পারছিল না, জঙ্গিদের কাছে কি পরিমাণ গুলি বা অস্ত্র আছে? আমাদের ও জঙ্গিদের মাঝখানের দূরত্ব তখন ১০-১৫ গজ হবে। হঠাৎ আবিরের পিস্তল জ্যাম হয়ে যায়। তখন সে চাপাতি নিয়ে অামাদের আক্রমণ করে। এ সময় অন্য কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিল। পুলিশের একটি দল ছিল পার্শ্ববর্তী ভবনের ছাদে। তারাও জঙ্গিদের লক্ষ্যে করে গুলি করছিল। প্রথমে আবির পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। পরে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে তার মৃত্যু হয়।’

মো. মোরসেদ জামান আরও বলেন, ‘আবিরের মৃত্যুর পরই চারপাশ থেকে সাঁড়াশি আক্রমণের ফলে এক জঙ্গি একটি বাড়ির ঘরে ঢুকে পড়ে। এরপর সে আর একটা বাড়িতে গেছে। বাড়ির পেছনের দিক দিয়ে অন্য বাড়িতে যায়। পরে পুলিশ এসে ওই বাড়ি ঘেরাও করে ফেলে। পরে সেখান থেকে আলাউদ্দিনকে আটক করা হয়।’

ঘটনাস্থলের আশপাশের আজিমউদ্দীন স্কুলসংলগ্ন এলাকার ১৫-২০ বাড়ি-দোকানের দেয়ালে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।

এদিকে আজিমউদ্দীন স্কুলসংলগ্ন ঘটনাস্থল ও পাশের এলাকায় আজ দুপুরের দিকে মানুষ চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে পরে বিকেলের দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এলাকাটি ঘিরে রেখেছেন।

১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার ঘটনা ঘটে। রাতভর জিম্মি ঘটনার পর সকালে কমান্ডো অভিযান চলে। এতে ২০ জিম্মি নিহত হন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই বিদেশি। এই হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গি দল আইএস। এই হামলার আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই আবারও হামলার ঘটনা ঘটল।



মন্তব্য চালু নেই