শেষ যাত্রারাণী চপল ভাদুরি

প্রায় কয়েক দশক ধরেই পশ্চিম বাংলার ঐতিহ্যবাহী যাত্রা পালাগুলো সবার কাছে বেশ পরিচিত। প্রথমদিকে যাত্রাপালাগুলোতে নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ ছিল। তাই নারী চরিত্র উপস্থাপন করার জন্য ছেলেদেরই মুখে রং লাগিয়ে নারী রূপ দেয়া হতো। আর এ সকল নারী চরিত্র করা পুরুষদের যাত্রারাণী বললেও ভুল হবে না। আধুনিকতার যুগে পশ্চিম বাংলায় যাত্রাপালা এখন বিলুপ্তির পথে। ভারতের শেষ যাত্রারাণী হিসেবে এখন পর্যন্ত যিনি বেঁচে আছেন তার নাম চপল ভাদুরি। ১৯৫৮ সালে কলকাতার একটি যাত্রা দলে মাত্র ৭৫ রুপির বিনিময়ে শুরু হয় তার অভিনয় জীবন।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে চপল ভাদুরির বলেন ‘সেই সময়টাতে মেয়েদের যাত্রায় অভিনয় করার উপর ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা, তাই আমরা একই সঙ্গে নারী ও পুরুষের অভিনয় করতাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি নারী চরিত্রে এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গেলাম যে, নিজেকে পুরুষের চেয়ে বেশি নারীই মনে হতো’। কর্মজীবনে তিনি নবিন কিশোর নামে এক পরিচালকের ৪৪ মিনিটের একটি তথ্যচিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। ৭৭ বছরে পা দিলেন এই প্রবীণ অভিনেতা। কিন্তু এখনও বেশ উদ্যামের সঙ্গে নারীর ভূমিকায় অভিনয় করে চলেছেন তিনি। তবে চপল ভাদুরি থেকে চপল রাণী হিসেবেই লোক থিয়েটারগুলোতে তিনি বেশ সমাদৃত।

যখন তিনি তরুণ ছিলেন তখন তার আর্থিক অবস্থা বেশ তুঙ্গে ছিল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রাচীন মিথের নানারকম দেব দেবীর অভিনয় করে একমাসে প্রায় আট হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতেন। তিনি বলেন ‘আমি একজন পুরুষ কিন্তু যখন আমি নারীর পোষাক পরিধাণ করি তখন নিজেকে একজন শক্তিশালী নারী বলেই মনে হয়’। এছাড়াও তিনি বলেন ‘মঞ্চে যখন আমি নারী চরিত্র করতে উঠি তখন আমার মনে হয় আমি একজন নারী থেকেও ভালো অভিনয় করি’।

যাত্রাপ্রেমিদের কাছে চপল ভাদুরি একটি বেশ পরিচিত নাম। বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য থিয়েটারে তিনি যাত্রা পরিবেশন করেছেন। কিন্তু বর্তমানে যাত্রপালা হারিয়ে যেতে বসেছে। হারিয়ে যেতে বসেছে চপল ভাদুরির নামের এই যাত্রারাণী। চপল ভাদুরি এখন পর্যন্ত অবিবাহিত, বর্তমানে তার বোনকে নিয়ে কলকাতার একটি ভাড়া বাড়িতে থাকে। এই মহলের প্রবীণ অভিনেতাদের প্রতি সরকারের নেই বিশেষ কোন দৃষ্টি। এরপরও সৌভাগ্যক্রমে সরকারের দুস্থ শিল্পীদের তহবিল থেকে তাকে প্রতিমাসে পনের’শ রুপি প্রদান করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই