হাজারো মানুষের চোখের পানি আর আহাজারিতে

শেষ বিদায় নিলো কলারোয়ার অগ্নিদগ্ধ কলেজ শিক্ষকের শিশুপুত্র তামিম

হাজার হাজার মানুষের চোখের পানি আর আহাজারিতে শেষ বিদায় নিলো সাতক্ষীরার কলারোয়ার অগ্নিদগ্ধ কলেজ শিক্ষকের শিশুপুত্র তামিম আজাদ। বুধবার সাড়ে রাত ৯টার দিকে উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া কেএল হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজা শেষে কোমল শিশুর নিথর দেহকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। যখন বয়স দুরন্তপনার ঠিক তখনই নরপিশাচদের করাল গ্রাসে প্রাণ দিতে হলো ৬বছরের শিশু তামিমকে। রাতের আধারের কোন বাধাই যেন জানাজা ও দাফনকে এতটুকু বাধাগ্রস্থ করতে পারেনি। জানাজা নামাজে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে হাইস্কুল মাঠ নিমিষেই ভরে যায়। জানাজা নামাজ পরিচালনা করেন মাও.ওমর আলী। জানাজায় অংশ নিতে ও মরহুমকে একনজর দেখতে লাঙ্গলঝাড়ায় ছুটে যান সাতক্ষীরা-১ আসনের সাংসদ এড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, অগ্নিদগ্ধ অধ্যাপক খলিলুর রহমান, কলারোয়া থানার ওসি শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম, ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ কালাম, প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রইছউদ্দীন, এমপি’র সহধর্মিনী শিক্ষিকা লিপি খাতুন, উপজেলা চেয়ারম্যানের সহধর্মীনি অধ্যাপিকা সুরাইয়া ইয়াসমিন রতœা, জেলা বাকশিসের সভাপতি অধ্যক্ষ আ.রহমান, সা.সম্পাদক অধ্যাপক মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি, কলারোয়া বাজার কমিটির সভাপতি আরাফাত হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ.রউফ, ফজলুর রহমান, প্রফেসর আ.রাজ্জাক, ঈমান আলী শেখ, আমান্ল্লুাহ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরা বেগম, অধ্যক্ষ আবু বক্কর ছিদ্দীক, অধ্যাপক জাভিদ হাসান, অধ্যাপক আবুল খায়ের, প্রধান শিক্ষক আ.রব, মাধ্য.শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমানুল্যাহ আমান, কলারোয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম রহমান, সা.সম্পাদক রাশেদুল হাসান কামরুল, যুগ্ম সা.সম্পাদক প্রভাষক আরিফ মাহমুদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক হাফিজুর রহমান, নির্বাহী সদস্য দীপক শেঠ, সাবেক সা.সম্পাদক শেখ জুলফিকরুজ্জামান জিল্লু, প্রভাষক জাহাঙ্গীর কবির সোহাগ, যুবলীগ আহবায়ক আলহাজ্ব শেখ আমজাদ হোসেন, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ অন্য শিক্ষকরা, সমাজের বিভিন্ন শ্রেনিপেশার মানুষসহ হাজার হাজার জনতা। ঢাকায় অবস্থানরত উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন ও ভাইস চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে জানাজাপূর্ব আলোচনায় বক্তব্য রাখেন। বুধবার সকালে ঢামেকে ময়না তদন্ত শেষে রাত ৯টার দিকে মরহুমের লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স কলারোয়া এসে পৌছায়। তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। জানাজার আগে অগ্নিদগ্ধ স্ত্রী ও অপর শিশুর সুচিকিৎসার্থে জেলা বাকশিস নগদ ৮০হাজার টাকা, কলারোয়ার উপজেলার ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১লাখ ৫হাজার ২৬৫টাকা, বাজার কমিটির সভাপতি আরাফাত হোসেন ১০হাজার টাকা ও অপর এক ব্যক্তি ৫হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে তুলে দেন। এসময় মরহুমের কফিনে পুষ্পার্ঘ অপর্ণ করেন বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। উল্লেখ্য, টানা ৬দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৫মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তামিম আজাদ মারা যান। কলারোয়া শেখ আমানুল্লাহ কলেজের শিক্ষক খলিলুর রহমানের ছোটপুত্র তামিম আজাদ উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেনির ছাত্র ছিল। গত ৯অক্টোবর বৃহষ্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের বাড়িতে কলারোয়ার প্রভাষক খলিলুর রহমানের ঘুমন্ত পরিবারের উপর দূর্বৃত্তরা পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে। এঘটনায় খলিলুর রহমান (৪৫) সামান্য অগ্নিদদ্ধ হলেও শরীরের সিংহভাগ পুড়ে ঝলসে যায় স্ত্রী শাহানারা খাতুন ঝর্ণা (৩৫), দুই শিশু পুত্র তানভির আসাদ (১১) ও তামিম আজাদ (৬) এর। মারাত্মক ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ওই দিনই তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। আশংকাজনক অবস্থায় টানা ৬দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মা ও ভাইকে ফেলে না ফেরার দেশে চলে যায় তামিম। আর বুধবার সকালে ময়না তদন্ত শেষে তার মরদেহ কলারোয়া এসে পৌছায় রাত ৯টার দিকে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। খলিলুর রহমানের স্ত্রী শাহানারা খাতুন ঝর্ণা ও বড় পুত্র তানভির আসাদের অবস্থা এখনো আশংকাজনক বলে জানা গেছে।



মন্তব্য চালু নেই