শেষ বিকেলের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশ

দিনের খেলা বাকি আর চার ওভার। প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ৩৩৮ রানের জবাবে ২ উইকেটে ১৮৮ রান তুলে ফেলেছে বাংলাদেশ। এমন সময়েই হঠাৎ সব এলোমেলো। শেষ বিকেলে মাত্র ৭ বল আর ৬ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারাল ৩ উইকেট!

দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ৬০ ওভারে ২১৪/৫। অপরাজিত আছেন সাকিব আল হাসান (১৮) ও মুশফিকুর রহিম (২)। আউট হয়ে ফিরেছেন সাব্বির রহমান (৪২), তাইজুল ইসলাম (০), ইমরুল কায়েস (৩৪), সৌম্য সরকার (৬১), তামিম ইকবাল (৪৯)।

৭ বলে ৩ উইকেট পতন: আগের ওভারেই পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। পরের ওভারে ফিরে গেলেন সাব্বির রহমানও। সুরাঙ্গা লাকমালের বলে শট খেলতে গিয়ে গালিতে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ক্যাচে পরিণত হন ডানহাতি ব্যাটসম্যান (৪২)। একটু আগেও যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ১৯২, সেটিই তখন ৫ উইকেটে ১৯৮! ৭ বল আর ৬ রানের মধ্যে নেই ৩ উইকেট!

শেষ বিকেলে জোড়া ধাক্কা: দিনের বাকি আর মাত্র ৪ ওভার। এমন সময়েই বাংলাদেশ শিবিরে এলো জোড়া ধাক্কা। চায়ম্যান বোলার লাকশান সান্দাকানের পরপর দুই বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন ইমরুল কায়েস ও তাইজুল ইসলাম। মিডল স্টাম্পের বলে শট খেলতে গিয়ে বল মিস করেন ইমরুল। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিতে একটুও সময় নেননি। ইমরুল আউট ৩৪ রান করে। পরের বলটি ছিল কুইকার ডেলিভারি। ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন তাইজুল, বল আঘাত হানল তার প্যাডে। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ চায় শ্রীলঙ্কা। তাতে পাল্টে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। হ্যাটট্রিক বলটি অবশ্য চার মেরেছেন সাকিব আল হাসান।

জীবন পেলেন ইমরুল: সুরাঙ্গা লাকমালের বল ডিপ স্কয়ার লেগে তুলে মেরেছিলেন ইমরুল কায়েস। খানিকটা দৌড়ে গিয়ে বল হাতে নিয়েও তালুবন্দি করতে পারেননি দিনেশ চান্দিমাল। ইমরুল তখন ব্যাট করছিলেন ২৫ রানে।

আবার ফিফটিতে থামলেন সৌম্য: আগের বলেই কাভারের ওপর দিয়ে দারুণ এক চার হাঁকিয়েছিলেন। পরের বলে সৌম্য সরকারকে বোকা বানালেন লাকশান সান্দাকান। চায়নাম্যান বোলারের ফ্লাইট দেওয়া বলে শট খেলতে গিয়ে লাইন মিস করলেন সৌম্য। ব্যাট ও প্যাডের মাঝের বিস্তর ফাঁক দিয়ে বল আঘাত হানল স্টাম্পে। দারুণ খেলতে থাকা সৌম্য বোল্ড হলেন ১২১ বলে ৬১ রান করে। টানা তিন ইনিংসে ফিফটি করেও সেটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে ব্যর্থ হলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের স্কোর তখন ২ উইকেটে ১৩০।

সৌম্যর ‘হ্যাটট্রিক’ ফিফটি: টানা তিন ইনিংসে ফিফটি করলেন সৌম্য সরকার। গলে প্রথম ইনিংসে ৭১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ৫৩। আজ কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসেও ছুঁলেন পঞ্চাশ। দিলরুয়ান পেরেরার বলে ৩ রান নিয়ে ৯৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

রিভিউ নিয়ে তামিমকে ফেরাল শ্রীলঙ্কা: ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ২ কিংবা ২৭ রানেই। প্রথমবার সুরাঙ্গা লাকমালের বলে আর দ্বিতীয়বার দিলরুয়ান পেরেরা বলে এলবিডব্লিউ ছিলেন তামিম ইকবাল। আম্পায়ার দেননি আউট, শ্রীলঙ্কাও নেয়নি রিভিউ! তবে তৃতীয়বার আর রক্ষা হয়নি। রঙ্গনা হেরাথের ফুল লেংথ বল ক্রস ব্যাটে খেলেন তামিম। বল আঘাত হানে তার প্যাডে। স্বাগতিক ফিল্ডারদের আবেদনে এবারও আউট দেননি আম্পায়ার। শ্রীলঙ্কা চায় রিভিউ।

টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মিডল ও লেগ স্টাম্পে আঘাত করত। পাল্টে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত, এলবিডব্লিউ তামিম। এর আগেই সৌম্য সরকারের সঙ্গে আরেকবার উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯৫ রান। ৯১ বলে ৬ চারে তামিম করেন ৪৯। তামিমের বিদায়ের পরই চা বিরতিতে যাওয়ার সময় সৌম্যর রান ৪০।

দিলশান-পারানাভিতানার পর তামিম-সৌম্য: চলতি সিরিজে টানা তিন ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ ছুঁলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। শ্রীলঙ্কায় সবশেষ কোনো সিরিজে তিন বা এর বেশি ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন তিলকরত্নে দিলশান ও থারাঙ্গা পারানাভিতানা। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে টানা চার ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিলেন দুই শ্রীলঙ্কান ওপেনার।

তামিম-সৌম্যর টানা তিন: টানা তিন ইনিংসে উদ্বোধনী জুটির ফিফটি করলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। গল টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১১৮ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭। আজ কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তামিম-সৌম্য জুটি ছুঁয়েছে পঞ্চাশ। ১৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর বিনা উইকেটে ৫৪। তামিমের রান তখন ২৩, সৌম্যর ২৭। শ্রীলঙ্কার ৩৩৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ পেয়েছে ভালো সূচনা।

সংগ্রহটা বড়ই হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার: ১৯৫ রানেই পড়েছিল ৭ উইকেট। তখন মনে হচ্ছিল, আড়াইশ’র মধ্যেই অলআউট হয়ে যাবে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দিনেশ চান্দিমালের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে লঙ্কানরা করেছে প্রায় সাড়ে তিনশ! কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চের আগে স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ৩৩৮ রানে। সুরাঙ্গা লাকমালকে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে শেষ উইকেটটি তুল নেন শুভাশীষ রায়। শেষ ৩ উইকেটে ১৪৩ রান যোগ করেছে শ্রীলঙ্কা!

বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ ৯০ রান দিয়ে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান ও শুভাশীষ নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। একটি উইকেট তাইজুল ইসলামের।

অবশেষে সরল চান্দিমাল-বাধা: আগের দিন থেকেই বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে উইকেটে ছিলেন দিনেশ চান্দিমাল। দ্বিতীয় দিনে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ইনিংস আরো বড় করার পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার স্কোর তিনশ পার করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপরই তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের গলার কাঁটা সরান মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার, তা হয়েই গেছে! মোসাদ্দেক হোসেনের ক্যাচ হওয়ার আগে ৩০০ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় ১৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন চান্দিমাল। শ্রীলঙ্কার স্কোর তখন ৯ উইকেটে ৩০৫।

করা গেল না তিনশ’র আগে অলআউট: টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে তিনশ রানের নিচে একবারই অলআউট করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার ইনিংস গুটিয়ে দিয়েছিল ২৯৩ রানে। কলম্বো টেস্টে ১৯৫ রানেই লঙ্কানদের ৭ উইকেট তুলে নিয়ে আরেকবার তিনশ’র আগে অলআউট করার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১০৫তম ওভারে সাকিবের বলে চার মেরে শ্রীলঙ্কার রান তিনশ পূর্ণ করেন দিনেশ চান্দিমাল।

প্রথম ঘণ্টায় হেরাথের উইকেট, চান্দিমালের সেঞ্চুরি: দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টায় খেলা হয়েছে ১৫.৫ ওভার। তাতে শ্রীলঙ্কা রান তুলেছে ৩১। বাংলাদেশ নিয়েছে রঙ্গনা হেরাথের উইকেট। দিনেশ চান্দিমাল করেছেন সেঞ্চুরি।

আরেকটি নাইনটি, আরেকটি সেঞ্চুরি: আগে সাতবার ৯০ ছুঁয়ে প্রতিবারই সেটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন। কলম্বো টেস্টেও সেটির পুনরাবৃত্তি ঘটালেন দিনেশ চান্দিমাল। ডানহাতি ব্যাটসম্যান তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি। প্রথম দিন শেষে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৮৬ রানে। আজ দ্বিতীয় দিন সকালে ব্যক্তিগত ৯৯ থেকে তাইজুল ইসলামের বল কাভার ও পয়েন্টের মাঝামাঝি পাঠিয়ে সিঙ্গেল নিয়ে ছুঁলেন তিন অঙ্ক। ২৪৪ বলে সেঞ্চুরি করতে চান্দিমাল চার মেরেছেন ৬টি।

জুটি ভাঙলেন সাকিব: দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই বাংলাদেশকে সফলতা এনে দেন সাকিব আল হাসান। রঙ্গনা হেরাথকে ফিরিয়ে ৫৫ রানের অষ্টম উইকেট জুটি ভাঙেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনারের অফ স্টাম্পের বল হেরাথের ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় স্লিপে। কয়েকবারের চেষ্টায় বল তালুবন্দি করেন সৌম্য সরকার। হেরাথ করেন ২৫। শ্রীলঙ্কার স্কোর তখন ৮ উইকেটে ২৫০।

মাঠে ফিরেছেন ইমরুল: প্রথম দিনের শেষ সেশনে শর্ট লেগে ফিল্ডিংয়ের সময় পায়ে বলের আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন ইমরুল কায়েস। তাকে নিয়ে তাই শঙ্কা ছিল। তবে সুখবর হচ্ছে, ইমরুলের চোট গুরুতর নয়, আজ দ্বিতীয় দিনে মাঠে ফিরেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

দ্রুত ফেলতে হবে চান্দিমালের উইকেট: শততম টেস্টের প্রথম দিনটা দুর্দান্ত কেটেছে বাংলাদেশের। সফরকারীরা তুলে নিয়েছে শ্রীলঙ্কার ৭ উইকেট। লঙ্কানরা রান করেছে ২৩৮। স্বাগতিকদের অলআউট করার মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দিনেশ চান্দিমাল। ব্যক্তিগত ৮৬ রান নিয়ে রঙ্গনা হেরাথের (১৯) সঙ্গে আজ দ্বিতীয় দিন শুরু করেছেন তিনি। সকালে দ্রুত ফেলতে হবে চান্দিমালের উইকেট।



মন্তব্য চালু নেই