রায়ে মর্মাহত, ক্ষুব্ধ ব্লগার রাজীবের বাবা

‘শুধু আপিলই নয়, আমি বিপ্লব করব’

বহুল আলোচিত ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যা মামলার রায় প্রত্যাখ্যান করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নিহতের বাবা ডা. মো. নাজিমুদ্দিন। তিনি এ রায়কে ‘খণ্ডিত বিচার’ বলেছেন।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণার পরে বেলা ২টা ১২ মিনিটে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

ডা. মো. নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। আমি বিরাট একটা আঘাত পেয়েছি। আমি সঠিক বিচার পাই নাই। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তারা আত্মস্বীকৃত খুনি। আমার সামনে স্বীকার করেছে। ডিবির সামনে স্বীকার করেছে। মিডিয়ার সামনে স্বীকার করেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকার করেছে। এরা সবাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। সবাই কোপাইছে।’

রাজীবের বাবা বলেন, ‘দুইজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়া বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিল, এটা কোন ধারাতে পড়ে? এক ধারায় বিচার দাবি করছি, অন্য ধারায় বিচার দিছে, এটা আমি মানতে পারি নাই। আমি এই রায় প্রত্যাখ্যান করলাম। আমি উচ্চ আদালতে যাব। আমি আপিল করব।’

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘শুধু আপিল না, আমি বিপ্লব করব। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, গণতন্ত্রহীনতা, মৌলবাদের উত্থান, এগুলো যতক্ষণ আমাদের দেশে আছে, ততক্ষণ এই দেশের মানুষ মুক্ত না, স্বাধীন না।’

অসন্তুষ্টি আদালতের বিচারে না কি তদন্তে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘তদন্ত সঠিক হয়েছে। সাক্ষীরা সঠিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেটগণ সঠিক সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ মামলার প্রত্যেকটা জিনিস সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিচারটা প্রভাবিত বা খণ্ডিত বিচার।’

ডা. নাজিমুদ্দিন ইরানে দশ বছর চিকিৎসক হিসেবে কাজ করতেন। এখন তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়ায় চিকিৎসাসেবা দেন। ফ্রান্সের প্যারিস ইউনিভার্সিটিতে চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। নিহত ব্লগার রাজীব ছিলেন স্থপতি। তার ছোট ছেলে নেওয়াজ মর্তুজা হায়দারও স্থপতি।

২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লবীর কালশীর পলাশনগরে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় এ মামলা করেন। মামলার তদন্তে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে আসে।

এ মামলার অভিযুক্ত আসামিরা হলেন : আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান জসীম উদ্দিন রাহমানী, এহসানুর রেজা রুম্মান, নাফিজ ইমতিয়াজ, ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ, মাকসুদুল হাসান অনিক, মো. নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ, সাদমান ইয়াছির মাহমুদ ও রেদোয়ানুল আজাদ রানা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজীব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ ‍যুক্তি-তর্কের শুনানি শেষে এ রায় দেন।

এ ছাড়া একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান শায়খুল হাদীস মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত। এটি প্রথম কোনো ব্লগার হত্যা মামলার রায়। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর সাড়ে নয় মাসের মাথায় এই রায় হলো।



মন্তব্য চালু নেই