শিশু রবিউল হত্যা: আসামি মিরাজের ফাঁসির আদেশ

বরগুনার আলোচিত শিশু মো. রবিউল আউয়াল হত্যার দায়ে আসামি মিরাজকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রায় ঘোষণা করেন বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ আবু তাহের। রায় ঘোষণার পর আসামি মিরাজকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে গত ১৯ মে বৃহস্পতিবার আদালতের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ২৬ মে মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু ২৬ মের আগে চার দিন ধরে বরগুনায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে এ মামলার রায় প্রস্তুত করতে না পারায় আজ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিল আদালত।

রায়ে ৩০১ ও ৩০২ ধারায় মিরাজকে ফাঁসির আদেশ এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ২০১ এর ৭ ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই জরিমানার টাকা মিরাজের মা-বাবা, ভাই-বোন এবং নানীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে আদায় করে বরিউলের বাবাকে প্রদান করতে বলা হয়েছে।

রায় উপলক্ষে সকাল ৯টার দিকে জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় মামলার একমাত্র আসামি মিরাজকে। মিরাজের উপস্থিতিতেই রায় পাঠ করে শোনানো হয়। রবিউল হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার বাবা-মা ও এলাকাবাসী। রায়ের সময় আদালতে রবিউলের নিকটাত্মীয়সহ ওর এলাকাবাসী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায় শুনে রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মিরাজের ফাঁসির রায়ে আমি সন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতেও যেন এ রায় বহাল থাকে। সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।

রবিউলের মা মোর্সেদা বেগম বলেন, এতদিন অপেক্ষা করেছি আসামিদের ফাঁসির রায় শোনার জন্য। বলতে বলতেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়।

হত্যার দায়ে মিরাজের ফাঁসির আদেশে সস্তোষ প্রকাশ করেন রবিউলের এলাকাবাসী। সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই তারা বরগুনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জড়ো হতে থাকেন।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বরগুনার অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জমান বাহাদুর বলেন, বিজ্ঞ আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় দিয়েছেন। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোটকেট সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রমাণের ভিত্তিতে এ রায় হয়নি। সাক্ষীরা সবাই শুনে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আবেগতাড়িত হয়ে এ রায় দেয়া হয়েছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত বছরের তিন আগস্ট রাতে পেতে রাখা জালের মাছ চুরির অভিযোগে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা উইনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের ১০ বছরের শিশু রবিউলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তার মরদেহ পাশের খালে ফেলে রাখে মিরাজ। পরের দিন ৪ আগস্ট বিকেলে স্থানীয় লকরার খালে রবিউলের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।

ওই দিনই রবিউলের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় পাঁচ আগস্ট শিশু রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা বাদী হয়ে তালতলী থানায় অভিযুক্ত মিরাজকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই মিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এরপর ছয় আগস্ট বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলী উপজেলার জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় রবিউলকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় মিরাজ। পরে ২৩ আগস্ট প্রধান আসামি মিরাজকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।



মন্তব্য চালু নেই