শিশু মুজিবের ছাত্রজীবন

আজ ১৭ মার্চ ২০১৫। আজকের এ দিনে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধেয় পিতা বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫ তম জন্ম বার্ষিকী। তাই আজকের এ দিনটিকে ১৯৯৬ সাল থেকে সরকারিভাবে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিন সরকারি ছুটি থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তদানীন্তন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত গোপালগঞ্জ মহাকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মার্চ /১৩২৭ বাংলা সনের ২০ চৈত্র জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আব্বার নাম শেখ লুৎফর রহমান। যিনি গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন। মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা আর এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। তার বড় বোন ফাতেমা বেগম, মেজ বোন আছিয়া বেগম (ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপির দাদি), সেজ বোন হেলেন ও ছোট বোন লাইলী ; তার ছোট ভাইয়ের নাম শেখ আবু নাসের (জন্ম-সেপ্টেম্বর ১৯২৮, মৃত্যু ১৫ আগস্ট ১৯৭৫)। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান হওয়ার কারণে নবাই তাঁকে আদর করে ডাকতেন খোকা বলে। তবে তার নানা আবদুল মজিদ এর রাখা শেখ মুজিব নামটিই পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বব্যাপী।

“ইসলাম প্রচার-প্রসারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, বংশ পরম্পরায় শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন দরবেশ ও ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম অধঃস্তন বংশধর। উল্লেখ্য যে, শেখ আউয়াল ছিলেন হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র.) এর সহযাত্রী। তারা উভয়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুদূর ইরাক থেকে চট্টগ্রামে এসেছিলেন ১৪৬৩ খি.।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি আজ কারো অজানা নয়। ছোট মুজিব ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সের সময় গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। স্কুলটি বাড়ি থেকে সোয়া এক কিলোমিটার দূরে হলেও বন্ধুদের সাথে নৌকায় বাইগার নদী পার হয়ে পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতেন। অথচ আমরা বড় হতে চাই, কিস্তু কষ্ট করতে ইচ্ছুক নই। যারা পরিকল্পিতভাবে পরিশ্রম করবে তারাই সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌছবে। এরপর নয় বছর বয়সের সময় গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯২৯ -১৯৩৪ সাল পর্যন্ত সেখানেই পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শেণিতে ভর্তি হন। ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। কারণ, তার চোখে জটিল রোগের কারণে সার্জারি করাতে হয়েছিল। এবং এ থেকে সম্পূর্ণ সেরে উঠতে বেশ সময় লেগেছিল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৩৯ সালে মিশনারি স্কুলে পড়ার সময় তদানীন্তন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ.কে ফজলুল হক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছে স্কুলের ছাদ সংস্কারের দাবী নিয়ে তাদের কাছে গিয়েছিলেন। ছাত্র জীবন থেকেই তার নেতৃত্ব ও আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৯৪২ সালে এনট্রাস পাস করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে আইন পড়ার জন্য ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে এ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। এভাবেই তার শিক্ষা জীবন শেষ হয়।

mabdulkahhar@gmail.com
মুহাম্মদ আবদুল কাহহার

আমাদের যতগুলো ভুল ও অবহেলা রয়েছে তার একটি হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা ভাষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। তার জীবনী আলোচনা করছি কিন্তু তার গুণাবলীকে আমরা গ্রহণ করিনা। ইতিহাস লিখছি কিন্তু তাঁর অবদানকে স্বীকার করিনা। নিজেরা তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানলেও সন্তানদেরকে তার সম্পর্কে কিছু বলছিনা। সঠিক তথ্য ও ইতিহাস তুলে ধরছিনা। কিন্তু কেন ? প্রত্যেক ব্যক্তির ভালো কাজগুলো প্রথমে জানা দরকার। আমরা সেটা না করে বিপরীত কাজগুলো করছি। অন্যের দোষ অনুসন্ধানের ব্যাপারে নিজেকে প-িত ভাবছি, তাইনা ? সত্যিকারার্থে আমরা দেশের জন্য কি করছি ? উত্তরে হয়েতো না শব্দটিই বেড়িয়ে আসবে। কারো অবদানকে ছোট করে দেখা মহা অন্যায় ও কৃপনতার শামিল।

ছোট বেলা থেকেই মুজিব ছিলেন মিশুক প্রকৃতির। প্রতিবেশি মানুষের জন্য তার দরদ ও ভালবাসার কমতি ছিলনা। খেলার সাথী ও বন্ধুদের সাথে আন্তরীকভাবেই মিশতেন। তার বন্ধুদের মধ্যে যাদের বই,খাতা ও কলম ছিল না তাদেরকে সাধ্যমত সহযোগীতা করতে চেষ্টা করেছেন। বন্ধুর প্রয়োজনে নিজের গায়ের জামা ও ব্যবহৃত ছাতাটি বন্ধুদের বিলিয়ে দিয়ে খালি গায়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ ভাবেই তিনি নিজেকে তৈরী করেছিলেন। কিশোর মনে এরকম ভাবনা সবার মাঝ দেখা যায় না। শিক্ষার্থীদের বলছি, তোমরা যারা তার মতো স্বপ্ন লালন করতেছো, তারা সাহসিকতার সাথে ত্যাগ করতে শিখবে। নিজে কম খেয়ে কিংবা না খেয়ে ক্ষুধার্ত বন্ধুকে খাবার দিয়ে দিবে। অপরের মতকে প্রধান্য দিতে শিখবে। বিদ্যালয়ে কিংবা বাড়িতে নিজের মতেকে বড় করে দেখবেনা। অপরের মতকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে। নেতৃত্ব দিতে হলে তাকে ত্যাগ করতে হয়। অপরের জিনিস ভোগ করে কিংবা অন্যকে অধিকার বঞ্চিত করে জোর করে হয়তো স্বার্থপর নেতা হতে পারবে। তাতে ভালবাসা থাকবেনা। আনন্দ থাকবেনা। তার মাঝে থাকবে লাঞ্চনা ও ঘৃণ্য ভরা লৌকিকতা। ছোট সময় থেকে যারা অন্যের উপকারে নিজেকে উৎস্বর্গ করে তারাই একদিন আদর্শ নেতা হওয়ার সুযোগ পায়। তোমাকে শুধু নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখলে হবেনা, আদর্শ নেতা হওয়ার শর্ত গুলো জেনে সঠিক পথে চলতে হবে। তোমার জীবনে এরকম বহু জন্ম বার্ষিকী আসবে। এটাকে কেবল অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নিজের জীবনকে কীভাবে সাজানো যায়, নিজেকে কীভাবে কল্যাণমুখী করা যায় সে আকাঙ্খা থাকতে হবে। তাহলে একদিন তুমিও শিশু মুজিবের মতো আলো ছড়িয়ে দিতে পারবে।

তোমার বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশিরা কষ্টে থাকবে আর তুমি মহা আনন্দে থাকবে তা হয় না। অপরের সুখে যে সুখী, অপরের দুঃখে যে দুঃখী সেই প্রকৃত মানুষ। মুজিবের বাল্য কালের কোন এক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবেশীদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলে অনেকেই না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছিল। এমতাবস্থায় মুজিব বাড়িতে এসে দেখলেন, তার বাড়িতে গোলা ভরা ধান। তখনই প্রতিবেশীদের ডেকে এনে ধানের গোলা থেকে ধান বিলিয়ে দিলেন। এমন আদর্শ নিয়ে তিনি বড় হয়েছিলেন। অথচ আজকের সমাজ ব্যবসাথায় তার মত নেতা পাওয়া যাবেনা বলেই মনে হয়। সুতারং শিশু মুজিবের গুণ-গান নয় তার আদর্শ ধারণ করা জরুরী। তাকে অনেক বড় করে ফুটিয়ে তুলব ,আর আমি তার মতো হবোনা। এরকম দ্বিমুখী চরিত্র সবার জন্য পরিহার করা উচিত। আদর্শ প্রচারের ক্ষেত্রে অভিনয় নয়, নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করাটাই যথাযথ দিবস পালনের স্বার্থকতা।

সর্বোপরি বলতে চাই, নিজের চরিত্রকে সুন্দর ও কল্যাণমুখী করে গড়তে হলে চরিত্রবান ব্যক্তিদের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ ও তার রাসুলের দেখানো পথে চলতে হবে। কেননা আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট



মন্তব্য চালু নেই