শিশুর দাঁতের সমস্যা বিষয়ে পিতা-মাতার যা জানা উচিৎ

দাঁতের বৃদ্ধিতে জটিল সেলুলার ও বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়া জড়িত। জেনেটিক ও পরিবেশগত উপাদানও এই বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তার করে। দাঁতের বৃদ্ধির যেকোন পর্যায়ে বাঁধার সৃষ্টি হলে বিশৃঙ্খল ভাবে দাঁত উঠে। তখন দাঁতের আকার, আকৃতি, সংখ্যা এবং গঠনে খুঁত দেখা যায়। এরা দাঁতের সৌন্দর্য ও বিন্যাসে সমস্যা তৈরি করে এবং দাঁতে ছিদ্র হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। শিশুর দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

দাঁতের রঙ

আপনার শিশু সন্তানের দাঁতটি মুক্তার মত ঝক ঝকে সাদা নাও হতে পারে। দাঁতের এই বিবর্ণতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন- জিনগত কারণে দাঁতের এনামেলের স্তর পাতলা হতে পারে, বৃদ্ধির সময়ে অতিরিক্ত ফ্লোরাইড গ্রহণ করলে, মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, আঘাতের কারণে। গর্ভাবস্থায় কোন ইনফেকশনের কারণে যদি মাকে এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হয় তাহলে সন্তানের দাঁতের বৃদ্ধি প্রভাবিত হয় এবং পরবর্তীতে সেই শিশুর দাঁতে বিবর্ণতার সমস্যা দেখা দেয়।

দাঁতের শ্রেণীবদ্ধতার সমস্যা

এটি খুব সাধারণ একটি সমস্যা এবং এটি হয় সাধারণত বংশগতির কারণে। দ্রুত দুধ দাঁত পড়ে যাওয়া, হাতের বুড়ো আঙ্গুল চোষা, মুখ দিয়ে শ্বাস নেয়া, জিহ্বা দিয়ে ধাক্কা দেয়া, দীর্ঘদিন বোতলের মাধ্যমে খাওয়ালে বা প্যাসিফায়ার ব্যবহার করলে, চোয়ালে আঘাত পেলে, মুখে টিউমার হলে ইত্যাদি কারণেও দাঁত শ্রেণীবদ্ধভাবে উঠার বদলে অন্য স্থানে উঠে। অনুপস্থিত দাঁত দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁকের সৃষ্টি করে। চোয়াল সংকীর্ণ হলে দাঁতের উপর দাঁত উঠে যায়। শিশুর দাঁত যদি সারিবদ্ধভাবে না উঠে তাহলে তা পরিষ্কার করা বেশ কঠিন। দাঁত ঠিকমত পরিষ্কার করা না গেলে ময়লা জমে দাঁত ক্ষয় ও মাড়ির সমস্যা তৈরি করে।

ক্যাভিটি

যদি ৬ বছরের বা তার কম বয়সের শিশুদের দাঁতে ক্ষয় রোগ দেখা দেয় তাহলে তা পরবর্তীতেও দাঁতে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। শিশুদের ঘুমের সময়ে দুধ খাওয়ালে দাঁত ক্ষয়ের সমস্যা হতে পারে। বাড়ন্ত শিশুর দাঁত ঠিকমত ব্রাশ না করলে, বাবা-মায়ের ডেন্টাল হিস্টোরি, খাদ্যাভ্যাস, দাঁতের গঠন ইত্যাদি কারণে দাঁতে ছিদ্র হতে পারে।

আগলি ডাকলিং ষ্টেজ

শিশুর ৮-৯ বছর বয়সের মধ্যে সামনের দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁক সৃষ্টি হয় একে আগলি ডাকলিং ষ্টেজ বলে। অবশ্য এটি একটি অস্থায়ী অবস্থা।

দ্রুত দুধ দাঁত পড়ে যাওয়া

বেশিরভাগ শিশুর ষষ্ঠ জন্মদিনের কাছাকাছি সময়ে তাদের স্থায়ী দাঁতের আবির্ভাব হতে শুরু করে। ৬-১২ বছর বয়সে তারা দুধ দাঁত সম্পূর্ণরূপে হারায়। যে দাঁতটি পড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায় সেটিকে আপনার সন্তানকেই বলুন আস্তে আস্তে নাড়াতে। এর ফলে দাঁত পড়ার ব্যথা ও রক্তপাত কম হবে। কিন্তু দাঁত ক্ষয়, মাড়ির ইনফেকশন, আঘাত বা রোগের কারণে দুধ দাঁত তাড়াতাড়ি পড়ে যেতে পারে। তাড়াতাড়ি দুধ দাঁত পড়ে গেলে শূন্যস্থান পূরণের জন্য পাশের স্থায়ী দাঁতের অবস্থানের পরিবর্তন হয়। এর ফলে দাঁতের শ্রেণীবিন্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

মাড়ির সমস্যা

শিশুদের ও মাড়িতে সমস্যা হতে পারে। দাঁতের মাড়ির সমস্যা হয় সাধারণত মুখের স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, দাঁত উঠলে, ইনফেকশন হলে, পুষ্টির অভাবে, ঔষধের প্রতিক্রিয়ায়, মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে, বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে। এছাড়াও টাইপ ১ ডায়াবেটিস, লিউকেমিয়া, হিমোফিলিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি ইত্যাদি।

শিশুর দাঁত সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে উঠার জন্য দাঁতের যত্ন নিন, এক বছর বয়স হলেই ডেন্টিস্ট কে দেখিয়ে নিন।



মন্তব্য চালু নেই