শিলংয়ে হাসিনার দৌড়ঝাঁপ

দুই মাসের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ স্বামী সালাহ উদ্দিন আহমদের হঠাৎ করেই খোঁজ মিললো ভারতে। কিন্তু চাইলেও সঙ্গে সঙ্গে যেতে পারেননি পাশের দেশ মেঘালয়ের শিলংয়ে। কারণ ভিসা জটিলতায় আটকে পড়ে আবেগ। অবশেষে আবেদনের বেশ কয়েকদিন পর রবিবার ভিসা হাতে পান বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ।

পরে একজন নিকটাত্মীয়কে নিয়ে ওইদিন রাতেই বিমানে ভারত যান হাসিনা আহমদ। সেখান থেকে মেঘালয়ের শিলং সিভিল হাসপাতালে গিয়ে স্বামীর সাক্ষাৎ পান বিএনপি দলীয় সাবেক এই সাংসদ।

নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জানালার গ্রিলের পাশে দাঁড়িয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন হাসিনা। এসময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে তিনি হাসপাতাল থেকে বিদায় নেন।

পরদিন মঙ্গলবার সকালে তিনি নেমে পড়েন স্বামীর পক্ষে আইনজীবী জোগাড়ে। প্রথমে যান শিলংয়ের অপরাধ-বিষয়ক আইনজীবী এসপি মাহান্তর কাছে। মহান্ত ব্যস্ত থাকায় কথা বলেন তার কনিষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে। পরে মাহান্তর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা বলে সেখান থেকে চলে আসেন।

এরপর স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ছুটে যান সিভিল হাসপাতালে। সাক্ষাৎ শেষে হাসিনা আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সালাহ উদ্দিনের শরীর খুবই খারাপ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি স্বামীকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যেতে চান। কারণ সেখানেই এর আগে তার চিকিৎসা হয়েছে।

সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে হাসিনা বলেন, ওনার শরীর খুবই খারাপ। একটানা দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। হাত-পা কাঁপতে থাকে। খুব দ্রুত তার উন্নত চিকিৎসা দরকার।

তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিনের হৃদরোগের সমস্যা আছে। কিডনির সমস্যাও জটিল আকার ধারণ করেছে।

এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্ন করেন, ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। বাংলাদেশ থেকে অনেকেই সেখানে চিকিৎসার জন্য যায়। তাহলে তিনি স্বামীকে কেন তৃতীয় একটি দেশে নিতে চাচ্ছেন? উত্তরে হাসিনা আহমদ বলেন, গত ২০ বছর ধরে সালাহ উদ্দিনের সব চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হয়েছে। হৃদরোগের জন্য তিনবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। রিং পরানো হয়েছে। কিডনির চিকিৎসাও সিঙ্গাপুরেই হচ্ছে। তাই সেখানেই স্বামীকে নিয়ে যেতে চান। তৃতীয় দেশ বলতে তারা সিঙ্গাপুরকেই বোঝাচ্ছেন।

সিঙ্গাপুরে নেওয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতার বিষয়টি বিবেচনা করছেন কি না? জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে জটিলতা আছে কি না, বুঝতে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলবো।

দ্বিতীয় দিনে স্বামীর সঙ্গে কী কথা হলো জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, পারিবারিক বিষয় ও বাচ্চাদের নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার কথা হয়েছে।

চিকিৎসকের বক্তব্য

শিলং সিভিল হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনের চিকিৎসক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জি কে গোস্বামী বলেছেন, সালাহ উদ্দিনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার ব্যাপারে আজ কোনো মেডিকেল বোর্ড বসছে না।

তিনি বলেন, গতকাল করা সিটি স্ক্যানের রিপোর্ট তিনি পেয়েছেন। এতে সালাহ উদ্দিনের স্বাস্থ্যগত কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। এ ছাড়া তাঁর চর্মরোগের সমস্যা আছে। সেটি আরেকটু খতিয়ে দেখা হবে। সব পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার পর তারা পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।

দুই মাস ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ১২ মে শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমদের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখান থেকে তিনি স্ত্রী হাসিনা আহমদকে ফোন করেন। এর মধ্যদিয়ে সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার অবসান ঘটে। কিন্তু তিনি কিভাবে শিলং গেলেন তার রহস্য এখন পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই