শিক্ষক লাঞ্ছনা: জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে হাইকোর্টের সন্তোষ

নারায়ণগঞ্জে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জেলা প্রশাসকের তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় করা সাধারণ ডায়েরির প্রেক্ষিতে চলমান তদন্তে অগ্রগতি আছে জানিয়ে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ সুপার ও বন্দর থানার ওসির দুই মাস সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। তাদের ৪ আগস্টের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চে জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এ সময় আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু শুনানি করেন।

জেলা প্রশাসকের আজকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১৬ মে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়। সভার আলোচ্য সূচিতে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছনার বিষয়টি ছিল।

প্রতিবেদন অনুসারে, সভায় এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়, যার প্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠনের প্রেক্ষিতে ওই কমিটির কার্যক্রম বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং বিষয়টি ফোনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। সভায় নতুন করে যাতে সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যদের নির্দেশ এবং শিক্ষকের যথাযথ চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখাতে বলা হয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার বলেন, ৩১ মে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মিয়ার সভাপতিত্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বিশেষ সভা হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সভায় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক, কোস্টগার্ড সদস্য, আনসার-ভিডিবির জেলা কমান্ড্যান্ট, এনএসআইয়ের উপপরিচালক, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নৌ-পুলিশের পরিদর্শক উপস্থিত ছিলেন। একই সঙ্গে পদক্ষেপ সম্পর্কে আগের প্রতিবেদনে বিস্তারিত না থাকায় অনুশোচনা প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক।

এর আগে গত ২৯ মে নারায়ণগঞ্জে স্কুল শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার ঘটনায়স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা বিস্তারিতভাবে জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ওই দিন আদালত বলেন, ডিসি, এসপি ও ওসির দাখিল করা প্রতিবেদন সুস্পষ্ট নয়, এগুলো দায়সারা গোছের।৮ জুন ডিসি ও এসপিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে আদেশ দেওয়া হয়।

গত ২৬ মে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের কাছ থেকে পদত্যাগ পত্রে জোর করে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ স্বাক্ষর নিয়েছিল বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি আদালতকে জানান।

গত ১৮ মে নারায়ণগঞ্জে স্কুল শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের তিন দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়।

প্রাক্তন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মহসিন রশিদ পত্রিকায় প্রকাশিত শিক্ষকের কান ধরে ওঠবস করার ঘটনায় প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত স্বতপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন।

গত ১৪ মে ইসলাম ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বিদ্যালয়ের ভেতরে অবরুদ্ধ করে মারধর করা হলে তিনি আহত হন। পরে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে।



মন্তব্য চালু নেই