‘শাসকদলের প্রার্থীদের জয়ী করতে গোপন চুক্তি’

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শাসকদলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ‘গোপন চুক্তি’ হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

দলটির দাবি, সেজন্য প্রথম ও দ্বিতীয় দফার মতো তৃতীয় দফাতেও ‘ব্যাপক অনিয়ম, সহিংসতা ও ভোট ডাকাতি’র মহোৎসব চলেছে।

শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে দেশের ৪৮ জেলার ৬২০টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে শনিবার। এ ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে ২ হাজার ৬৭২ জন। সাধারণ সদস্য পদে ২০ হাজার ৯৪৩ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৬ হাজার ২৯৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছে।

এরইমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ২৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৭৪ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৭৯ জন নির্বাচিত হয়েছেন। এসব ইউপিতে মোট ভোটার এক কোটি নয় লাখ ৮০ হাজার ৩৫৫ জন।

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা সারা দেশে ভোট ডাকাতি ও ব্যাপক অনিয়ম করেছে। ভোটের আগের দিন রাত থেকেই ব্যালট বাক্স ভরে রেখেছে। শনিবার সকাল থেকেই বিএনপির এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। তারা সব এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।’

এ সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল, বিএনপির এজেন্টদের বের করা দেওয়া, প্রকাশ্য নৌকা মার্কায় সিল মারাসহ নানা অভিযোগ করেন তিনি।

অনিয়মের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি দাবি করে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব অভিযোগ করেন, এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য নির্বাচনকে রক্তাক্ত করা, সেই পৈশাচিক ঐতিহ্য তারা ধরে রেখেছে। রক্তাক্ত করেছে ইউনিয়নের পর ইউনিয়ন, অসংখ্য মানুষ নিহত হয়েছে, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এমনটি তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে অনেককে হত্যা করেছে।’

রিজভী বলেন, ‘দেশবাসীর নিকট এটি কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। কারণ ভোটারবিহীন সরকারের জোর করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তাদের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতেই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সহিংস ও ভোট ডাকাতির ঘটনা প্রত্যক্ষ করে আসছে দেশবাসী।’

আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করে প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে তামাশার খেলা খেলেছে। এবারও দেশব্যাপী প্রথম ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রশাসনের সহায়তায় পেশি শক্তির সাহায্যে ভোট লুটপাটের যে খেলা প্রদর্শন করলো তার জুড়ি নেই।’

ইউপি নির্বাচনের সহিংসতা রোধে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে ‘রসিকতা’হিসেবেও আখ্যায়িত করেন বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘সরকার আজ পরাজয়ের মুখে দাঁড়িয়েছে। তাদের দখল করা ক্ষমতার স্বর্গ টিকিয়ে রাখার বিরুদ্ধে জনগণের ওপর দশগুণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। গণতন্ত্রে অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে নির্বাচন, সেই নির্বাচনকে সরকার উপহাসে পরিণত করেছে। আর তাতে সহায়তা করেছে সীমাহীন মুড়তা আর জনগণের শক্তি সম্পর্কে অতলস্পর্শী অজ্ঞ নির্বাচন কমিশন।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই