শাপলাকে মেরে ফেলেছি, আমাকে ফাঁসি দেন

আমার সঙ্গে শাপলার ধর্ম ভাই-বোন সম্পর্ক ছিল। এ কারণেই শাপলাকে অত্যন্ত ভালোবাসতাম। আমি তাকে মেরে ফেলতে চাইনি। কিন্তু কী যে হয়ে গেলো, কিছু বুঝতে পারছি না। হঠাৎ করেই কোদাল দিয়ে কোপ মারি শাপলার মাথায়। এতে শাপলা মাটিতে লুটে পড়ে এবং আমার সামনেই কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যায়। আমি শাপলার মৃত্যুতে অনুতপ্ত, তার মৃত কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। শাপলা যেহেতু নেই, তাই আমাকেও ফাঁসি দেন।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে গ্রেফতার শাপলা হত্যা মামলার প্রধান আসামি আনোয়ার হোসেন এ স্বীকারোক্তি দেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনোয়ার হোসেন বলেন পুলিশকে, ‘শাপলা আমার সংসার তছনছ করেছে। আমি একাই তাকে মেরে ফেলেছি। এ জন্য আর কেউ দায়ী নয়।’

পুলিশকে স্বীকারোক্তি দেওয়ার সময় তাকে ভারসাম্যহীন দেখাচ্ছিল। তিনি উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের সিংহডাঙ্গা গ্রামের আনার আলীর ছেলে। নিহত শাপলা বেগম একই গ্রামের রাহেদুল আলম লেচুর স্ত্রী।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহাদত হোসেন জানান, গ্রেফতার আনোয়ার হোসেনকে শুক্রবার দুপুরের দিকে গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হবে।

এর আগে চান্দু (৪০) ও লাইজু মিয়া (৩৫) নামে আরও দুইজনকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক তাদের গাইবান্ধা জেলা কারাগারে পাঠান। এছাড়াও এ হত্যা মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাহেদুল আলম লেচু দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তার স্ত্রী ২০১০ সালে প্রতিবেশী আব্দুল করিমকে ৩৮ শতক জমি বর্গা দেন। সেই থেকেই জমি চাষাবাদ করছেন আব্দুল করিম।

তিনি এবার রোপা আমন চাষ করার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু একই গ্রামের আনোয়ার তাকে ওই জমি চাষে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে তিনি ২ ফেব্রুয়ারি জমিতে চাষ দেওয়ার সময় আনোয়ার ও তার পক্ষের লোকজন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। একপর্যায়ে আনোয়ার পরের দিন ৩ ফেব্রুয়ারি সকালের দিকে আইল কেটে ওই জমির পানি বের করে দেয়। এ খবর পেয়ে শাপলা বেগম জমিতে আসেন এবং আইল কেটে জমি থেকে পানি বের করে দেওয়ার কারণ জানতে চান।

এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে আনোয়ার হোসেন কোদাল দিয়ে তার মাথায় কোপ মারে। এতে ঘটনাস্থলেই শাপলা বেগমের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই আব্দুর রহিম সাজু বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আনোয়ারসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয়ে আরো ৫/৭ জনকে আসামি করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই