শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে বিদেশীদের শঙ্কা

২৮ এপ্রিল রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন কূটনীতিকরা। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচারণার সময়ে ধারাবাহিকভাবে সন্ত্রাস ও সহিংস ঘটনা সংগঠিত হওয়ায় বিদেশীরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে রয়েছেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নির্বাচনের প্রচারণায় সহিংসতার ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

কূটনীতিকরা চায় সিটি নির্বাচন হোক সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। যেখানে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে। এ জন্য বিদেশীদের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে সংযম প্রদর্শনের জন্য একাধিকবার আহ্বান জানান হয়েছে।

ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাজ্য দূতাবাসে গত সপ্তাহে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ঢাকায় দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাজ্য দূতাবাসের ওই ঘরোয়া অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী সকলেই সিটি নির্বাচন নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। ওই আলোচনায় সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে সকলের মধ্যেই শঙ্কা লক্ষ্য করা গেছে। বিদেশীরা বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় যেভাবে সন্ত্রাস এবং সহিংসতা ঘটছে, ভোটের দিন যে ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারবেন তার নিশ্চয়তা কোথায়। বিদেশীরা ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনেরও সমালোচনা করেন। বিদেশীরা বলেন, বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছেন কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না।

ঘরোয়া ওই অনুষ্ঠানে সরকারের একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তারা বিদেশীদের জানান, একটি দল ক্ষমতার লোভে নির্বাচন নিয়ে সন্ত্রাস এবং সহিংসতা ঘটাচ্ছে। সরকার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আন্তরিক। কিন্তু বাংলাদেশে শান্তি বিরাজ করুক একটি দল তা চায় না। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে ওই গোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং ইউরোপীয় কমিশন গণমাধ্যমে শনিবার বার্তা পাঠিয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ এবং শঙ্কা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় সংগঠিত সহিংস কর্মকাণ্ড নিয়ে নিন্দাও জানিয়েছে।

সিটি নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এক বার্তায় জানায়, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে সংগঠিত সহিংস ঘটনাগুলো দুঃখজনক। নির্বাচনী প্রচারণায় সংগঠিত এমন সহিংসতা উদ্বেগজনক।’

নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র বলে, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও আইনের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের দায়িত্বও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।’

যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডব্লিউ গিবসন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে সংগঠিত সহিংস ঘটনাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ব্রিটেন। নির্বাচনী প্রচারণায় সংগঠিত এমন সহিংসতা উদ্বেগজনক।’

রবার্ট ডব্লিউ গিবসন আরও বলেন, ‘সহিংসতামুক্ত এবং ভয়-ভীতিহীন নির্বাচনী প্রচারণার পরিবেশ নিশ্চিতে রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের যথাযথ দায়িত্ব পালনের উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। যাতে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করতে পারেন।’

গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় জাপান বলে, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার সময়ে ধারাবাহিকভাবে সংগঠিত সন্ত্রাস এবং সহিংসত ঘটনায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এই ঘটনাগুলো জাপান গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাপান বিশ্বাস করে, নির্বাচনকে ঘিরে এমন ঘটনা, জনসাধারণের জন্য নেতিবাচক এবং সমাজ গঠন ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তরায়।’

ওই বার্তায় আরও বলা হয়, ‘জাপান আশা করে, নির্বাচনকে ঘিরে সব দল ধৈর্যের পরিচয় দেবে এবং গঠনমূলক কাজ করবে। যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুখপাত্রের দফতর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে সব রাজনৈতিক দলের সংযম প্রদর্শন করা প্রয়োজন। সহিংসতা যাতে উস্কে না যায়। রাজনৈতিক দলের নেতাদের নির্বাচন নিয়ে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ উচিত। যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবং ভোটাররা যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’

বার্তায় আরও বলা হয়, ‘টেকসই উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সব রাজনৈতিক দলকে সহিংসতা এবং উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এমন কর্মকাণ্ড বর্জন করে গঠনমূলক কাজ করা প্রয়োজন।’



মন্তব্য চালু নেই