শহীদ দিবসে নজিরবিহীন নিরাপত্তা

এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এর আশেপাশের এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে র‌্যাব-পুলিশ। গোয়েন্দা ইউনিট, বোমা স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিটসহ র‌্যাব ও পুলিশের সব ধরণের ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি ২১ ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্যে এ নজিরবিহীন নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে।

শুক্রবার বিকেলে পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বইমেলা ও আশেপাশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার পর সাংবাদিকদের বলেন, এবার ২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ঢাকাসহ সারাদেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর অর্থাৎ রাত ১২টা থেকে শেষ প্রহর পর্যন্ত সারাদেশে পুলিশের টহল অব্যাহত থাকবে। হুমকি না থাকলেও সম্ভাব্য বিষয় বিবেচনায় সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোকে বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা শহরগুলোকেও নিরাপত্তার আওতায় নেওয়া হয়েছে।

একই দিন সকাল ১১টার দিকে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ শহীদ মিনারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘিরে যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধে তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে র‌্যাব।

তিনি জানান, যেহেতু এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসবেন, সে উপলক্ষে থাকবে র‌্যাবের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

তিনি আরো জানান, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আশেপাশে সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। টহলের প্রতিটি মোবাইল টিমে স্ট্যান্ডবাই ৪০ জন করে র‌্যাব সদস্য থাকবে। এভাবে ৫ হাজার র‌্যাব সদস্যের টিম মাঠে থাকবে।

শহীদ মিনারকে ঘিরে এ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকবে র‌্যাব-২, র‌্যাব-৩ ও র‌্যাব-৪। র‌্যাব-১০ ও অন্যান্য র‌্যাব ইউনিটগুলো সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ২০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা এবং চারটি মুভিং ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদ মিনার ও এর আশপাশে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে ৮ হাজার পোশাকধারী এবং এক হাজার সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্য রয়েছে । এ ছাড়া ওই এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই দিন রাজধানীতে ২০ হাজার পুলিশ সদস্য নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করবে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘২১শে ফেব্রুয়ারি পুরো শহীদ মিনার এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, শহীদ মিনার কেন্দ্রিক (নীচ) নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জগন্নাথ হল-টিএসসি-ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পলাশী মোড়-চানখারপুল-হাইকোর্ট কেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শহীদ মিনার কেন্দ্রিক উপরের(Rooftop) নিরাপত্তা ব্যবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে ওই এলাকার সড়কগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। ২০ তারিখ অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পরদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকবে। আর্চওয়ের মধ্যে দিয়ে সবাইকে শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে হবে। শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে শহীদ মিনার পর্যন্ত রাস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি বসানো থাকবে। সেগুলিকে মনিটরিং করার জন্য শহীদ মিনারের পাশে একটি বুথ থাকবে। পুলিশের ঊর্ধতন ও বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারা এটি দেখভাল করবেন। কোনো অসঙ্গতি দেখা দিলে তা মাঠের পুলিশ কর্মকর্তাদের অবহিত করে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হবে।’

কমিশনার বলেন, ‘যারা সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবেন তারা জনসাধারণের সঙ্গে মিশে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। কেউ শক্তি প্রয়োগ করতে চাইলেও যেন সেটি ভেস্তে দেওয়া হয়। শহীদ মিনার ও এর আশেপাশের এলাকায় ফুটপাথ পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে সেখানে কোনো হকার বসতে না পারে। এছাড়া কোনো সভা সমাবেশ যাতে কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারেও তারা সজাগ থাকবে। আগত অতিথিদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম পার্কে জায়গা রাখা হয়েছে। এই জায়গা ছাড়া অন্যকোথাও গাড়ি পার্কিং করতে দেওয়া হবে না।’

কমিশনার আরো বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার যেসব গেট রয়েছে, সেগুলোতে পাহাড়া বসানো থাকবে। এক্ষেত্রে প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্য ও বিএনসিসির সদস্যরা পুলিশকে সহায়তা করবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর ওইসব গেট দিয়ে কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফুল দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে শহীদ মিনার জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে। তবে জনগণকে অবশ্যই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।’

ট্রাফিক বিভাগের ডিসি রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে শাহবাগ হয়ে টিএসসির দিকে কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। হাইকোর্ট হয়ে দোয়েল চত্বরের দিকে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। বকশীবাজার মোড় থেকে পলাশী ও শহীদ মিনারের দিকে গাড়ি যাবে না। নীলক্ষেত হয়ে পলাশীর মোড়ের দিকে গাড়ি চলাচল করতে পারবে না। চানখারপুল হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনের রাস্তা দিয়েও কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না।’

রমনা বিভাগের উপ কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘শহীদ মিনারে প্রবেশের জন্য পলাশীর দিক ও বকশীবাজার মোড়ের রাস্তা পায়ে হেটে ব্যবহার করতে পারবেন জনসাধারণ। আর বের হওয়ার জন্য চানখারপুল ও দোয়েল চত্বরের রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন।’



মন্তব্য চালু নেই