শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১১টি খনিজ উপাদান

আমাদের শরীরে কোনো খনিজ উপাদান তৈরি হয় না। তাই সঠিক খাবারই খনিজের উত্‍স। তাজা ফল, সবজি, মাছ, ডিম এবং সাত ঘণ্টা ঘুম অতি আবশ্যক যদি আপনার শরীরটাকে ঠিক রাখতে চান। শরীরে খনিজের চাহিদা মাত্র চার শতাংশ হলেও শরীরের কার্যক্রমে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জেনে নিন শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ১১টি খনিজ উপাদান সম্পর্কে।

ক্যালসিয়াম
প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর ক্যালসিয়ামের দৈনিক চাহিদা ১০০০ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক চাহিদা ১২০০ মিলিগ্রাম। কাঠবাদাম, ডুমুর, গাজর, সরিষা, বাদামি চাল, রসুন, খেজুর, পালংশাক, কাজুবাদাম ও পেঁপেতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। শক্ত ও মজবুত দাঁত এবং হাড় গঠন, পেশির গঠন, কোষের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং যোগাযোগে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর অভাবে হাড়ের ক্ষয়রোগ, হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, অস্টিওপোরোসিস রোগ হয়। এর আধিক্যে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি এবং গল ব্লাডারে পাথর হয়।

পটাসিয়াম
প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের পটাসিয়ামের দৈনিক চাহিদা ২০০০ মিলিগ্রাম। কমলালেবু, কলা, চিনাবাদাম, শিম, ডাবের পানি ও পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম রয়েছে। পটাসিয়াম স্নায়ুতন্ত্র, পেশির গঠন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে পানির ভারসাম্য ও কোষের জন্য প্রয়োজনীয়। এর অভাবে দুশ্চিন্তা, অবসাদ ও হৃদরোগ হয়। পটাসিয়ামের আধিক্যে হাইপারটেনশন হয়।

সেলেনিয়াম
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক চাহিদা ৭০ মাইক্রোগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দৈনিক চাহিদা ৫৫ মাইক্রোগ্রাম। প্রাণীদেহের মাংস, টুনামাছ, কাঁকড়া, শস্য ও মসলায় সেলেনিয়াম থাকে। শুক্রাণু উত্‍পাদন, কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা এবং থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্রমের জন্য সেলেনিয়াম আবশ্যক। এর অভাবে মাংসপেশির দুর্বলতা, কার্ডিওমায়োপ্যাথি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সোডিয়াম
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক চাহিদা ১৫০০ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দৈনিক চাহিদা ১৩০০ মিলিগ্রাম। দুগ্ধজাত খাবার, লেবুর রস, লবণে সোডিয়াম রয়েছে। সোডিয়াম রক্ত এবং কোষে পানির সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর অভাবে অবসাদ, মানসিক বিভ্রান্তি, পেশিতে খিঁচ ধরা ইত্যাদি হতে পারে।

জিংক
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের জিংকের দৈনিক চাহিদা ১৫ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দৈনিক চাহিদা ১২ মিলিগ্রাম। লাল মাংস, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, সয়া, দুগ্ধজাত খাবার, মাশরুম, যকৃত এবং সূর্যমুখীর বীজ জিংকের চমত্‍কার উত্‍স। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বিশেষ করে প্রদাহ, ঠাণ্ডা ও কফের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, উত্‍পাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, স্নায়ুতন্ত্র ও রক্ত জমাট বাঁধতে জিংক সাহায্য করে। এর অভাবে অস্বাভাবিক গর্ভধারণ, চোখের সমস্যা, ঘ্রাণ ও স্বাদ শক্তির অস্বাভাবিকতা, চর্মরোগ ইত্যাদি হতে পারে।

ক্লোরাইড
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক চাহিদা ২০০০ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দৈনিক চাহিদা ২৩০০ মিলিগ্রাম। ব্রোকোলি, খোসাসহ আলু, কমলার রস, সবুজ শাকসবজি, কলা, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরাইড রয়েছে। স্নায়ুতন্ত্র, পেশির কার্যক্রম, রক্ত ও কোষে পানির সমতা রক্ষা করে ক্লোরাইড। এর অভাবে দুর্বল পেশি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং কিডনির কার্যক্রমে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

কপার
প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষ উভয়েরই দৈনিক চাহিদা ২ থেকে ৬ মিলিগ্রাম। গরুর মাংস ও যকৃত, চিংড়ি মাছ, কাজুবাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, গমের ভুষি, শস্য ইত্যাদিতে কপার রয়েছে। রক্ত সঞ্চালন, লোহিত রক্তকণিকার গঠন ও লৌহের কার্যক্রমে সহায়তা করে কপার। এর অভাবে রক্ত সঞ্চলনে সমস্যা দেখা দেয়।

ফ্লুরাইড
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক চাহিদা ৩ মিলিগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দৈনিক চাহিদা ৪ মিলিগ্রাম। ফ্লুরাইডযুক্ত পানি, চা, মাছ এবং ফ্লুরাইড টুথপেস্ট ও মাউথ ওয়াশে ফ্লুরাইড থাকে। দাঁতের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধ করে ফ্লুরাইড। এর অভাবে হলুদ দাঁত ও দাঁত ক্ষয় হয়।

আয়োডিন
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের দৈনিক চাহিদা ১১০০ মাইক্রোগ্রাম এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর দৈনিক চাহিদা ১৫০ মাইক্রোগ্রাম। আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক খাবার ও শৈবালে আয়োডিন রয়েছে। থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে আয়োডিন ভূমিকা রাখে। এর অভাবে গলগণ্ড রোগ হয়।

লৌহ
প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষ উভয়েরই দৈনিক চাহিদা ১০-১২ মিলিগ্রাম। সবুজ শাকসবজি, গরুর মাংস, ডিম, পোলট্রি এবং সয়া লৌহের প্রধান উত্‍স। রক্তে অক্সিজেন সংবহনের কাজে লৌহ সহায়তা করে। এর অভাবে রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা, নখের রং পালটে যাওয়া, বিষণ্নতা ইত্যাদি হতে পারে। এর আধিক্যে হৃদরোগ হতে পারে।

ম্যাগনেসিয়াম
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ও নারী উভয়েরই দৈনিক চাহিদা ১০-১২ মিলিগ্রাম। গরুর মাংস, মাশরুম, পালংশাক, শস্যদ্রব্য, সবুজ শাকসবজি, কাঠবাদাম, অ্যাভোকাডো, কলা, কিউই ফল ও চিংড়িমাছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। ম্যাগনেসিয়াম পেশি ও স্নায়ু কার্যক্রমে, হৃদস্পন্দন ঠিক রাখতে ও হাড়ের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর অভাবে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই