শফিক রেহমানের ‘মুক্তিতে বাধা নেই’

আজ থেকে ১৯ বছর আগে এই দিনে ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ইংল্যান্ডের রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়ানা। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট ভোররাতে প্যারিসে একটি ভয়ানক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার।

ডায়ানার এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শুধু ব্রিটিশরাই নয় বরং সারা বিশ্বের মানুষকেও সেদিন স্তব্ধ করে দিয়েছিল। ১৯ বছর পরেও এসেও মানুষের মনে জায়গা করে আছেন সদাহাস্য ও প্রানবন্ত প্রিন্সেস ডায়ানা। এই দিনটিকে ইংল্যান্ডের জনগণ এখনো স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। এখনো তার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে।

ডায়ানার পুরো নাম ছিল ডায়ানা স্পেন্সার। তাকে দেখেই তার রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৃতীয় চার্লস। চার্লসের দৃষ্টিতে ডায়ানা পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। তারা দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু রানী এলিজাবেথ প্রথমে এ বিয়েতে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যান।

১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ধুমধামের সঙ্গে তাদের বিয়ে হয়। বিশ্বের প্রায় পাঁচশ কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করেছিল সত্যিকারের এক রাজকীয় বিয়ে। সেই সময় প্রিন্স চার্লসের বয়স ছিল বত্রিশ আর প্রিন্সেস ডায়ানার বয়স ছিল বিশ। চরম উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আনন্দের জোয়ারে শুরু হয় প্রিন্স চার্লস আর প্রিন্সেস ডায়ানার নতুন জীবন।

নানা সেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রতিনিয়ত জড়িয়ে থাকতেন প্রিন্সেস ডায়ানা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রিন্সেস ডায়ানা ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। তিনি দানশীলতার জন্যই বিশেষ খ্যাত ছিলেন। কিন্তু তার এই দাতব্য কার্যক্রম ঢাকা পড়ে যায় বিভিন্ন কেলেঙ্কারীর গুজবে। এর মধ্যে গুজব ছড়ায় ব্যক্তিগত জীবনে চার্লসের সঙ্গে ভালো সময় কাটছিল না ডায়নার।

এর মধ্যে ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে প্রিন্স চার্লসের হাতে এলো একটা টেপ রেকর্ড ক্যাসেট। তাতে এক নারী ও এক পুরুষের সংলাপ রেকর্ড করা ছিল। নারী কণ্ঠটি ছিল প্রিন্সেস ডায়ানার। পুরুষ কণ্ঠটি জেমস গিলাবের। চার্লস অনুসন্ধান করে জানলেন, গিলাব ছিলেন ডায়ানার বিয়ের আগের জীবনের প্রেমিক। আর এই কথোপকথনটি সেই সময়ের।

সাইরিল রিনান নামে এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা এবং জেন নরগোভ নামের এক ব্যক্তি গোপনে আড়ি পেতে ডায়ানা ও জেমস গিলাবের কণ্ঠ ধারণ করেছিলেন। এর পর সেটি প্রিন্স চার্লসের কাছে পাঠানো হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্যাসেটের বিষয়টি সবার নজরে চলে আসে। প্রকাশিত হয়ে পড়ে এই আলোচিত অডিও টেপটি।

ডায়ানার প্রেমের বিষয়টি নিয়ে ঝড় ওঠে রাজপ্রাসাদেও। সংসারে ওঠে ভাঙনের সুর। ১৯৯২ সালের ৯ ডিসেম্বর ডায়ানা ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেন।

অনেকের মতেই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ডায়ানা। তবে ডায়ানার মৃত্যু হত্যা নাকি নিছকই দুর্ঘটনা সেটি আজও রহস্যই রয়ে গেছে।

ডায়ানাকে বলা হত পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান মহিলা। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদান, এবং ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে তার আন্দোলন তাকে বিখ্যাত করেছে। জীবদ্দশায় ডায়ানাকে বলা হত বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত নারী। অবশ্য সমালোচকদের মতে এই খ্যাতি এবং খ্যাতির প্রচেষ্টাই ডায়ানার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ব্রিটিশ রাজবধূদের মধ্যে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন প্রিন্সেস ডায়ানা। বিশ্বজুড়ে তার মতো জনপ্রিয় নারী আর দ্বিতীয়টি আসেনি।



মন্তব্য চালু নেই