শপথের পর মন্ত্রীরা যা বললেন

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রিসভায় দ্বিতীয়বারের মতো রদবদলের মধ্যে দিয়ে নতুন তিনজন মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় যোগ হয়েছে।

মঙ্গলবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান।
শপথ গ্রহণ শেষে বঙ্গভবনের ভিতরে এবং বাইরে সাংবাদিকদের সামনে এ নতুন মন্ত্রীরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

শপথ গ্রহণ করার জন্য নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে প্রথমে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন নূরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি বিকেল সাড়ে ৪টায় বঙ্গভবন প্রবেশের মূল ফটকে গাড়ি নিয়ে আসেন। এরপর তিনি মূল ফটকের গাড়িতে বসে প্রায় দশ-পনের মিনিট অপেক্ষা করেন। এরপর বঙ্গভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে নিতে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। তারপরেই বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন নূরজ্জামান আহমেদ। তারপর কিছুটা সময় বিরতি নিয়ে বঙ্গভবনে একে একে প্রবেশ করেন তারানা হালিম, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ও আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এরপর প্রধানমন্ত্রী বিকেলে ৫টা ৫০মিনিটে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। ইফতারের আগেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হয়। মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যরা ও প্রধানমন্ত্রীসহ আগত অতিথিরা বঙ্গবভনেই ইফতার করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর সন্ধ্যা ৭টা ৩২মিনিটের দিকে বঙ্গভবন থেকে বের হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।

শপথবাক্য পাঠ শেষে তারানা হালিম বলেন, ‘আমি সাংগঠনিকভাবে যখন যে দায়িত্ব পেয়েছি, তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছি। এখন আমার উপর আরো অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমি সবার সহযোগিতা নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাওয়ার চেষ্টা করব।’
মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে গাড়িতে বসে হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলেন, ‘খুবই ভাল লাগছে।’

মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পেরে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে নূরজ্জামান আহমেদ বলেন, ‘আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ। আমি এখন বড় দায়িত্ব পেয়েছি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বের জায়গা থেকে কাজ করে যাব। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমরাও তার নেতৃত্বে দেশের মানুষের জন্য কাজ করব।’
নূরুল ইসলমা বিএসসি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’

বর্তমান সরকারের তো সামনে সাড়ে তিন বছরেরও কম সময় আছে। এই অল্প সময়ে দায়িত্ব পালন করাকে চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এটাকে চ্যালেঞ্জ মনে করি না। দায়িত্ব পেয়েছি, এখন সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে সমাধান করার উদ্যোগ নেব।’

প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আগে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও মনে করি পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বই পালন করেছি। তখন আমার মাথার ওপর একটি বটবৃক্ষ (প্রধানমন্ত্রী) ছিল। আমি তার কাছে সকল প্রকার সাহায্য, সহযোগিতা ও পরামর্শ পেয়েছি। আর তার (প্রধানমন্ত্রী) দায়িত্ব আগেও যেমন ছিল, এখনো তেমন আছে।’

ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘অনুভূতির খুব পরিবর্তন হয়নি। কারণ আগে যে কাজ করেছি, এখনো সে কাজই করব। আগেও সিনসিয়ারলি কাজ করেছি। এখনো সিনসিয়ারলি কাজ করব। নতুন করে তো আর পাখা গজাবে না।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমি তো প্রধানমন্ত্রীকে বলিনি যে আমাকে মন্ত্রী করতে হবে। তিনি যা ভালো মনে করছেন, তাই এটা করছেন।’

অন্যদিকে মন্ত্রিসভায় শপথ নেওয়া নতুন পাঁচ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে বিমুক্ত করা হয়েছে এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে। আর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর নতুন দায়িত্বভার পেয়েছেন চট্রগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আসাদুজ্জামান খান কামাল ওই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব পেয়েছেন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট তারানা হালিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। আর লালমনিরহাট-২ আসনের নুরুজ্জামান আহমেদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।

গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এরপর একই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান এ এইচ মাহমুদ আলী ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মো. নজরুল ইসলাম হিরু। সে সময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে সরিয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এদিকে হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে গত বছরের ১২ অক্টোবর ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই