শচীন-লতাকে নিয়ে ব্যঙ্গ, বিপদে ভারতীয় কমেডিয়ান

ভারতের দুই কিংবদন্তী শচীন টেন্ডুলকার ও লতা মঙ্গেশকরের মধ্যে একটি কাল্পনিক কথোপকথনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে চরম বিপদে পড়েছেন সে দেশের কমেডিয়ান তন্ময় ভাট।

ওই ভিডিওতে দুই বিখ্যাত মারাঠি ‘আইকন’ টেন্ডুলকার ও লতাকে অপমান করা হয়েছে – এই যুক্তি দিয়ে ওই কমেডিয়ানের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দল এমএনএস, তন্ময় ভাটকে তারা পেটাবে বলেও হুমকি দিয়েছে।

এদিকে ভারতীয় সমাজে কিংবদন্তীদের নিয়ে ঠাট্টা-রসিকতা আদৌ করা যায় কি না – এই বিতর্ককে নতুন করে উসকে দিয়েছে এই ঘটনা, আর সেখানেও পরিষ্কার দুরকম মত দেখা যাচ্ছে।

শচীন টেন্ডুলকারের গলা নকল করে ওই ভিডিওতে কমেডিয়ান তন্ময় ভাট বলছিলেন ‘ভিরাট কোহলি কি আমার চেয়ে দশগুণ ভাল ব্যাটসম্যান?’

এ নিয়েই নকল শচীন তর্ক জুড়েছেন, তর্কে তিনি টেনে এনেছেন তার প্রিয় ‘লতাতাই’ বা লতা মঙ্গেশকরকেও, আর ভিডিওর নকল লতা যখন কোহলির পক্ষেই ভোট দিচ্ছেন, তখন শচীন রেগে তাকে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো বুড়ি বলে গাল পাড়ছেন। বলছেন ‘জন স্নোও মরেছে, আপনি কেন যাচ্ছেন না?’

কমেডি হিসেবে কতটা উঁচু মানের, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকলেও এই ভিডিও নিয়েই গত চব্বিশ ঘন্টা ধরে ভারত তোলপাড়।

একাধিক বলিউড তারকা এরপর টুইটারে তন্ময় ভাটকে তুলোধোনা করেছেন, আর মুম্বাইতে রাজ ঠাকরের দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা আজ হুঁশিয়ারি দিয়েছে যেখানে তারা ওই কমেডিয়ানকে দেখতে পাবে – সেখানেই পেটাবে।

ওই দলের নেতা আমেয় খোপকার শিবাজী পার্ক থানায় তন্ময় ভাটের বিরুদ্ধে এফআইআর করে বেরিয়ে এসেই বলেন, তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।

‘এই ভিডিও যদি রসিকতা হয় – তাহলে উনি নিজের বাবা-মাকে নিয়ে এই সব বানান, টেন্ডুলকার বা লতাদিদির মতো যাদের আমরা ভগবান মানি তাদের নিয়ে এই সব মোটেই বরদাস্ত করব না। ওকে আমরা ছাড়ব না, যেখানে পাব সেখানেই পেটাব’ হুমকি দেন ওই রাজনৈতিক নেতা।

শচীন বা লতা নিজেরা কেউই এই বিতর্ক নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি – তবে দেশ জুড়ে তাদের অজস্র গুণগ্রাহী এই ভিডিও দেখে ভীষণই ক্ষেপে গেছেন।

ভারতে কি তাহলে এই আইকনদের দিয়ে রসিকতা করার কোনও অধিকারই নেই? টেন্ডুলকারের জীবনীকার বোরিয়া মজুমদার বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন।

তার বক্তব্য, ‘রসিকতার অধিকার নিশ্চয় আছে – কিন্তু তার একটা সীমা থাকতে হবে। রসিকতার বদলে যখন সেটা অসম্মান বা অপমানের পর্যায়ে চলে যায় তখন সেটা কিছুতেই মানা যায় না।’

বোরিয়া মজুমদার আরও বলছিলেন, ‘যখন ঠাট্টা করে কেউ বলেন আপনার মুখটা আট দিনের মৃত মানুষের মতো লাগছে তখন সেটা কি আর ঠাট্টা থাকে? আমরা কিন্তু খুব ভাল করেই জানি রসিকতা নিয়ে আমাদের গ্রহণযোগ্যতার সীমাটা কোথায়!’

তবে তন্ময় ভাটের বন্ধু ও সহ-কমেডিয়ান জিভেষু আহলুওয়ালিয়া মনে করেন এখানে তাদের বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে।

তার যুক্তি, ‘কোনও রসিকতা ভাল লাগবে, কোনওটা লাগবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওটা জোক, কোনও বিশ্বাস বা মতবাদ নয়। আমি নিশ্চিত তন্ময়ও আমাদের সবার মতোই শচীন ও লতাকে শ্রদ্ধা করে – কিন্তু তাই বলে ওদের নিয়ে কি জোক বানানো যাবে না? সব সিনেমা বা গান নিশ্চয় আমার ভাল লাগে না, তাই বলে আমি কি যারা সেগুলো বানিয়েছে তাদের পেটাতে যাই?’

বোরিয়া মজুমদার আবার পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘শচীন ইন্ডিয়ার হয়ে ভাল খেলছেন না, কিংবা তার গলাটা মিকি মাউসের মতো – অথবা তার চুলের স্টাইল ওরকম, সে সব নিয়ে কেউ কিছু বলতেই পারেন। কিন্তু একটা ভারসাম্য আপনাকে রাখতেই হবে।’

এই বিতর্কের মধ্যে দিয়েই পরিষ্কার, ভারতীয় সমাজ তাদের নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে রসিকতা একটা পর্যায়েই সীমিত রাখতে পছন্দ করে।

এদিকে এই বিতর্কের কেন্দ্রে যিনি, সেই তন্ময় ভাট নিজে অবশ্য এখনও ক্ষমা-টমা চাননি, বরং তার ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে তিনি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ স্ন্যাপচ্যাটের কাছে রয়্যালটির অর্থ দাবি করে বসেছেন।-সূত্র : বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই