গ্রায়েম স্মিথের কলাম

লড়াইটা প্রোটিয়া বোলিং আর ভারতীয় ব্যাটিংয়ের

লেখাটি শুরু করতে চাই এই তথ্য দিয়ে যে, বিশ্বকাপে ভারতের কাছে কখনও হারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। যেভাবে পাকিস্তানের কাছে, বিশ্বকাপে কখনো হারেনি ভারত। তবে আমি বলছি না যে, এই মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকায় জিতে যাবে। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপের মঞ্চে তিনবার ভারতের মুখোমুখি হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা একবারও হারেনি। তবে প্রত্যেকবারই খুব কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়েছে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে। এবং এই তিনবারই শেষে ব্যাট করে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে জয় পেয়েছে প্রোটিয়া বাহিনী।

বিশ্বকাপে এই দুটো দল মুখোমুখি হওয়া মানেই তাই স্মরণীয় ম্যাচ। অ্যাডিলেড (১৯৯২), হোভ (১৯৯৯) ও নাগপুরের (২০১১) ম্যাচগুলো ছিল ওই সব বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। আমার মতে, ২০১৫ সালে (এবারের বিশ্বকাপে) মেলবোর্নেও অন্যরকম কিছু হবে বলে মনে হয় না।

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড সব সময়ই ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রিয় স্টেডিয়াম। ৯৭ হাজার দর্শক বসতে পারে এখানে। গ্যালারির মতো মাঠও বিশাল। বিশ্বকাপের এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আবহে দুই দলের উপর স্নায়ুর চাপ থাকা স্বাভাবিক। এ কারণে আমি বিশ্বাস করি, যে দল যত দ্রুত ছন্দ পাবে, ম্যাচে তাদের জয়ের সম্ভাবনাও বাড়বে তত।

২০১৪-১৫ মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিনটি ওয়ানডে খেলা হয়েছে মেলবোর্নে এবং সবগুলোই ছিল হাই স্কোরিং। আমার বিশ্বাস, রোববারের ম্যাচেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

আরেকটা বিষয় জানানো প্রয়োজন। সেটা হচ্ছে, ২০১৩ সাল থেকে হিসাব ধরলে, ওয়ানডেতে রান তাড়া করে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ী দলের নাম ভারত। যে কোন রানের পিছু ধাওয়া করায় তাই আত্মবিশ্বাসী থাকবে তারা। মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলির মতো ক্রিকেটার দলের মধ্যে এ বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছে।

টপ অর্ডারে শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি রয়েছে। গত কয়েক বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে যারা রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে এদের নাম থাকে সবার ওপরে। সুরেশ রায়নাও মনে হচ্ছে ঠিক সময়ে ফর্মে ফিরেছেন। রবিন্দ্র জাদেজার গড় এবং স্ট্রাইকরেট খারাপ নয়। তবে দ্রুতগতির উইকেটে ওর রেকর্ড কোনমতেই ভালো না। ওই খারাপ ফর্ম নিয়েই এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছে রায়না।

আজিঙ্কা রাহানে হয়তো ব্যাটিং লাইনআপে নিজের ভূমিকা বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে এখনো। এমনিতে সে ওপেনার। যে ৪৭টি ওয়ানডে খেলেছে এর মধ্যে একবারই কেবল চারের নীচে নেমে ব্যাট করেছে। অথচ, পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নেমেছে সাত নম্বরে।

অধিনায়ক ধোনির ব্যাট হয়তো সেভাবে হাসছে না ইদানিং। তবে এটি নিয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার কিছু নেই। কারণ সর্বশেষ ১১ বছরে বারবার ম্যাচ শেষ করা ও জেতানোর ক্ষমতা দেখিয়েছে ভারতীয় অধিনায়ক।

এই ম্যাচে শুরুর দিকে উইকেট নেওয়ার গুরুত্ব খুব ভালো বোঝার কথা প্রোটিয়াদের। ভারতের টপ অর্ডারের তিনজনকে উইকেটে সেট হতে দেওয়া যাবে না। দিলে তারা মিডল অর্ডারের জন্য রানের উৎসব তৈরি করবেন।

শেষ পর্যন্ত আমি মনে করি, লড়াইটা হবে প্রোটিয়াস বোলিংয়ের সঙ্গে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের। ঠিক এই কারণেই এ ম্যাচে আমি ফারহান বেহার্ডিয়েনের জায়গায় ওয়েন পারনেলকে খেলানোর পক্ষে। গত তিন মাস অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে খেলে খেলে ফাস্ট, শর্ট-পিচ বোলিংয়ের মুখোমুখি হওয়ার অভ্যাস হয়তো গড়ে তুলেছে ভারত। তারপরও আমি মনে করি, প্রোটিয়ারা এই অস্ত্রেই ঘায়েল করতে পারে তাদের।

এজন্য আমি বাড়তি ফাস্ট বোলার হিসেবে পারনেলকে খেলাতে চাই। তাতে ভারতের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ধাওয়ান, রায়না, জাদেজাদের বিপক্ষে বোলিংয়ের সুবিধাও পাবে সে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলানোর তত্ত্ব রয়েছে ঠিক। তবে প্রথম ম্যাচে ডেভিড মিলার ও জেপি ডুমিনির ব্যাটিং ওই তত্ত্বের পথে না হাঁটতে উৎসাহিত করছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

আর ভারতের বোলিং আক্রমণ হয়তো এতটা দুর্দান্ত নয়, তবে বেশ কার্যকর যে এটা প্রমান হয়েছে। মোহাম্মদ শামি ও মোহিত শর্মা প্রথম ম্যাচে ভালোই বোলিং করেছে। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল, দুই স্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিন বা জাদেজা যেন চাপ সৃষ্টি করতে না পারে। ধোনি ওর বোলারদের ব্যবহার করবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে, ফিল্ডিং পজিশনও হয়তো হবে না প্রথাগত। তবে আগে-পরে যখনই ব্যাটিং করুক, প্রোটিয়াদের শীর্ষ ছয় ব্যাটসম্যান অনেক রান করার আত্মবিশ্বাস নিয়েই ম্যাচ শুরু করতে হবে।

ইতিহাস ও রেকর্ডের পাতা জানিয়ে দিচ্ছে, ভারতের বিপক্ষে পরে ব্যাটিং করলে নিশ্চিত হবে প্রোটিয়াদের জয়ও। তবে এমন ম্যাচের চিত্রনাট্য কখনোই খুব সরল হয় না। রোববারও তাই ভিন্ন কিছু হবে না বলে আমার বিশ্বাস।

আইসিসির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের সৌজন্যে



মন্তব্য চালু নেই