লেডি আল কায়েদা থেকে লেডি আইএস

আলজেরিয়া, ইরাক থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত ইসলামি জঙ্গিদের মুখে এখন একটাই নাম, আফিয়া সিদ্দিকী। তারা পাকিস্তানের এই বিজ্ঞানীর মুক্তি দাবি করছেন বন্দীর বিনিময়ে। এ ব্যাপারে আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সুর একই। সম্প্রতি মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলিকে অপহরণ করে ৪২ বছরের আফিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়েছিল আইএস। যদিও শেষ পর্যন্ত গত আগস্টে ফোলির শিরশ্ছেদ করে তারা।
এখন প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক কে এই আফিয়া? জঙ্গিদের কাছে কেনই বা তার এত গুরুত্ব?
২০০৮ সালে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার ওপর হামলা চালানোর অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দী আছেন আফিয়া। ওসামা বিন লাদেন প্রতিষ্ঠিত আল কায়েদার সঙ্গে জড়িত প্রথম নারী হিসেবে উঠে এসেছিল আফিয়ার নাম, যিনি লেডি আল কায়েদা নামেই পরিচিত।
আফিয়ার গল্প জানতে হলে একটু পেছনে ফিরতে হবে।
পাকিস্তান আর জাম্বিয়ায় শৈশব কাটিয়ে ১৮ বছরের আফিয়া চলে যান টেক্সাস। বোস্টনের ব্রান্ডেস ইউনিভার্সিটি থেকে নিয়ে পিএইচডি করেন তিনি। ১৯৯০ সালে করাচির এক চিকিৎসকের সঙ্গে তার বিয়ে। এরপরই তিনি ইসলামি দাতব্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে কোরআন শরিফ বিতরণ শুরু করেন তিনি। ২০০১ সালে ইসলামি প্রতিষ্ঠানে ঢালাও অর্থসাহায্য এবং নাইটভিশন চশমা ও যুদ্ধের ওপরে বই কিনে এফবিআইয়ের নজরে পড়েন আফিয়া ও তার স্বামী। পরের বছর পাকিস্তানে ফেরেন আফিয়া। সেখানেই বিচ্ছেদ হয় স্বামীর সঙ্গে। এরপরই উধাও হয়ে যান তিনি।
মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ৯/১১ হামলার পরিকল্পনাকারী আল কায়েদা নেতা খালেদ শেখ মহম্মদের ভাতিজার সঙ্গে বিয়ে হয় আফিয়ার। তবে আফিয়ার পরিবার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ২০০৩ সালে করাচি থেকে খালেদ শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরই তিন সন্তানকে নিয়ে করাচি থেকে উধাও হন আফিয়া। ২০০৮ সালে আফিয়া ফিরে আসেন আফগানিস্তানে। সেখানকার গজনি প্রদেশ থেকে স্থানীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের সূত্রে জানা যায়, ময়শ্চারাইজারের বোতলে দুই কেজি সোডিয়াম সায়ানাইড নিয়ে যাচ্ছিলেন আফিয়া। তাছাড়া, রাসায়নিক অস্ত্রের সাহায্যে নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজ এবং এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ে হামলা চালানোর পরিকল্পনা সংক্রান্ত কিছু কাগজপত্রও ছিল তার কাছে।
এরপরে আফিয়াকে জেরা শুরু করে আফগানিস্তানে অবস্থানরত মার্কিন সেনারা। জেরা চলাকালীন এক সেনার রাইফেল কেড়ে গুলি চালান আফিয়া। মুখে স্লোগান, ‘আমেরিকার মৃত্যু হোক,’ ‘আমি আমেরিকানদের মারতে চাই’। এরপর আফিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রে নেয়া হয়। সেনাদের উপরে হামলার অভিযোগে ২০১০-এ তার ৮৬ বছরের কারাদণ্ড হয়।
ভক্ত-সমর্থকদের দাবি আফিয়া আসলে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের শিকার। পাঁচটি বছর তাকে পাকিস্তানের বাগরামে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত একটি গোপন কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল।
আফিয়ার পরিবারেরও দাবি আল কায়েদা কিংবা আইএস আফিয়ার মুক্তি দাবি করে যে বন্দী বিনিময় করতে চাচ্ছে এ ব্যাপারে আফিয়া কিছুই জানে না। তারা কেবল আফিয়ার নাম ভাঙাচ্ছে।
আফিয়ার বোনের দুঃখ, তার বোন যদি জানতে পারে, তাকে নিয়ে এ সব কথা হচ্ছে, তাহলে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। সাংবাদিক ফোলি নিধনের পর লেডি আল আফিয়া এখন লেডি আইএস বলে জনপ্রিয় হচ্ছেন জঙ্গিমহলে।



মন্তব্য চালু নেই