লেখাপড়া না করেও যেভাবে বিস্ময় বালক হলেন মুস্তাফিজুর রহমান

স্কুলের গৎবাঁধা নিয়মে পড়ালেখা না করেও ইতিহাস গড়েছেন অনেকে। ওই তালিকায় উঠতে যাচ্ছে আরেকটি নাম: বাংলাদেশ ক্রিকেটের আরেক বিস্ময় বালক মুস্তাফিজুর রহমান।

বড় দুই ভাই পড়ালেখা করতে না পারায় পরিবারের ইচ্ছা ছিলো তাকে অনেক দূর পর্যন্ত পড়ানোর। স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে তাদের মুস্তাফিজ। কিন্তু, ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত অথচ স্বল্পভাষী এই ছেলেটির স্কুল ভালো লাগতো না মোটেই।

এক কথার মানুষ মুস্তাফিজ বলেছেন: “আমার দ্বারা পড়ালেখা হবে না।” ফলে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েই এই খাতায় “দ্য ইন্ড” লিখে ইতি টেনে দেন মুস্তাফিজ।

ক্রিকেটবিশ্বে নতুন বিষ্ময়-বালক মুস্তাফিজুর রহমান সম্পর্কে অজানা সব কথা জানালেন তার সবচেয়ে বড় প্রেরণা সেঝভাই ও মামা।

তাই বলে তাদের মনে যে কষ্ট আছে তা মোটেও না। বরং গর্বে তাদের মন ভরে গেছে। ঊনিশ বছরের এই বালকের হাতেই যে তৈরি হলো বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস। জয়ের ইতিহাস। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মত সিরিজ জয়ের ইতিহাস।

আজ পুরো বাংলাদেশকে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে মাশরাফি বাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ যোদ্ধা এই মুস্তাফিজ।

চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মুস্তাফিজ। দু’ বোন তাদের। পরিবারের সবার আদরের সে। এজন্য পড়ালেখা ফেলে মাঠে যাওয়ার বায়না ধরলেও না বলতেন না ভাইয়েরা।

শীতের ভোরেও নিজের মোটরসাইকেলের পেছনে বসিয়ে তার ভাই তাকে পৌঁছে দিয়ে আসতেন প্রশিক্ষণ মাঠে। বন্ধুর পরামর্শে তার ভাই তাকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন সাতক্ষীরা ক্রিকেট একাডেমিতে।

সেখানে প্রশিক্ষণে থাকার সময়েই অনুর্ধ-১৭ প্রতিযোগিতায় ডাক পড়ে মুস্তাফিজের। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ফাস্ট বোলিংয়ে ট্রায়াল দিতে যান তিনি। সেখানেই নজরে আসেন কোচদের। এরপর ২০১৪ সালের অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে নয় উইকেট নিয়ে সবার নজরে আসেন।

২৪ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে সফরকারী পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একমাত্র টুয়েন্টি ২০ ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ইয়ং মুস্তাফিজুর রহমানের। তার প্রথম শিকার হন শহিদ আফ্রিদি।

আর ১৯ জুন, ২০১৫ ভারতের বিরুদ্ধে খেলে এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক ঘটে মুস্তাফিজের। প্রথম ম্যাচেই পাঁচ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে ছয় উইকেট নিয়ে আরো উঁচুতে মোস্তাফিজুর রহমান।

বিসিবির হাইপারফরমান্স স্কোয়াডেও মুস্তাফিজকে রাখা হয়েছে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য। এখন তার সামনে শুধু নতুন নতুন ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন।

আর লক্ষ্য বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণ।



মন্তব্য চালু নেই