লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.. আজ পবিত্র হজ

‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক্’। অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার- ধ্বনিতে আজ মুখর হবে আরাফাতের ময়দান।

আজ পবিত্র হজ। হজ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ইচ্ছা করা’। ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের একটি হচ্ছে হজ। তালবিয়া পাঠ করে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে পাপমুক্তির আকুল বাসনায় লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে থাকবেন। কেউ পাহাড়ের কাছে, কেউ সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত করবেন।

পবিত্র কাবা শরিফ থেকে ৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনা। পায়ে হেঁটে, আবার কেউবা গাড়িতে চড়ে পৌঁছে গেছেন। মিনা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের প্রান্তর। মক্কা শরিফের অদূরে এই আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনকেই হজের দিন বলা হয়। তাদের পরিধানে এহরামের শ্বেত শুভ্র দুই খ- কাপড়। ধনী-গরিব সকলেরই এক বেশ।

আরাফাহ ও আরাফাত- এই দুটো শব্দই আরবিতে প্রচলিত। দৈর্ঘ্যে দুই মাইল, প্রস্থেও দুই মাইল। এই বিরাট সমতল ময়দানের নাম আরাফাত। ময়দানের তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত। ময়দানের দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে মক্কা হাদা তায়েফ রিং রোড। এই সড়কের দক্ষিণ পাশে আবেদি উপত্যকায় মক্কার উম্মুল কুরআ বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরে সাদ পাহাড়। সেখান থেকে আরাফাত সীমান্ত পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার। সেখান থেকে দক্ষিণে মসজিদে নামিরায় গিয়ে আরাফাত সীমান্ত শেষ হয়েছে।

মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেবেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আরাফাত ময়দানে অবস্থানের যে দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, তাতে এই খুতবা এবং নামাজ দেখানো হয়।

আজ থেকে হজের কর্মসূচি এ রকম- আজ ৮ জিলহজ মিনায় থাকবেন হাজিরা। ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে তারা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এরপর আরাফাত থেকে মুজদালিফায় গিয়ে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন। ১০ জিলহজ হাজিরা মিনায় বড় শয়তানকে পাথর মারবেন, কোরবানি দেবেন, মাথা মু-ন বা চুল ছেঁটে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অবস্থান করবেন। সেখানে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা। প্রত্যেক শয়তানকে সাতটি করে পাথর মারতে হয়।

মসজিদে খায়েফ থেকে মক্কার দিকে আসার সময় প্রথমে জামারায় সগির বা ছোট শয়তান, তারপর জামারায় ওস্তা বা মেজো শয়তান, এরপর জামারায় আকাবা বা বড় শয়তান। তিন শয়তানকে তাকবিরসহ পাথর নিক্ষেপ করা হজের অপরিহার্য অংশ। শয়তানের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে এই পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

হাজিরা যাতে নির্বিঘ্নে শয়তানকে পাথর মারতে পারেন, সে জন্য কয়েক বছর ধরে ওই জায়গা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এবার এখানে প্রতি ঘণ্টায় তিন লাখ হাজি পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন।



মন্তব্য চালু নেই