লঞ্চে ভয়, স্বস্তি ফেরিতে

কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটের মাঝ পদ্মায় আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার এক মাস চারদিন পার হয়েছে। এখনও এ নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীদের মধ্যে স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি।

লঞ্চে পদ্মা পার হতে এখন ভয় লাগে যাত্রীদের। তাই অধিকাংশ যাত্রীই পার হচ্ছেন ফেরিতে। কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটের কাওড়াকান্দি ঘাটে যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ করলে তাদের এই অভিব্যক্তি ফুটে উঠে।

পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকা যাওয়া বেশিরভাগ যাত্রীই লঞ্চ ঘাটে না গিয়ে চলে যাচ্ছে ফেরির দিকে। আলাপ করলে তারা বলেন, ‘সময় বেশি লাগলেও ফেরিতেই যাবো। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আর কখনোই লঞ্চে পদ্মা পার হচ্ছি না। কষ্ট হলেও ফেরিতেই যাবো।
এরকম মন্তব্য ঢাকা যাওয়া এবং ঢাকা ফেরত অসংখ্য যাত্রীর। ফলে পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা খুবই নগন্য।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লঞ্চের উপরে কিছু সংখ্যক যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। নিচে বসে কেউ যাচ্ছেন না। লঞ্চে কখনো কখনো একশ যাত্রীও হয় না বলে লঞ্চঘাট সূত্র জানায়। আর এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকরা।

সরেজমিনে বুধবার শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, আগের মতো তেমন ভিড় নেই লঞ্চ ঘাটে। যাত্রীদের চাপ ফেরির দিকে। বেশিরভাগ যাত্রীই রোরো ফেরির অপেক্ষায় ঘাটে বসে থাকে, কিন্তু লঞ্চে পার হয় না।

পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার এ ৩৪ দিন পার হলেও লঞ্চ ডুবির সেই আতঙ্ক এখনও তাড়া করছে যাত্রীদের। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীদের মনে গেঁথে রয়েছে সেই মর্মান্তিক ঘটনার ছায়া।

বরিশাল থেকে আসা বিলকিস বেগম বলেন, ‘গাড়ি থেকে নেমে পদ্মার দিকে তাকাতেই বুকটা কেঁপে উঠলো। মনে পরে গেলো লঞ্চ ডুবির ঘটনা। এ অবস্থায় লঞ্চে পার হবো কেমন করে। দেরি হলেও ফেরিতেই যাবো।’

বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের এ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে নিয়মিত ৮৫টি লঞ্চ, ১৭টি ফেরি, ৫ শতাধিক স্পিডবোট ও দেড় শতাধিক ট্রলার চলাচল করে। লঞ্চ ও ফেরি ছাড়া বাকি নৌযানের চলাচলের কোনো বৈধতা নেই।

স্বল্প খরচে চলাচলের ক্ষেত্রে লঞ্চ ছিল এ নৌরুটের সাধারণ মানুষের জনপ্রিয় বাহন। গত এক মাস আগেও লঞ্চে তিল ধারণের জায়গা পেতো না যাত্রীরা। লঞ্চে উঠতে এক প্রকার যুদ্ধ করতে হতো।

মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে এ নৌরুটের। আড়াই শতাধিক যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ ডুবির ঘটনায় ব্যপক প্রাণহানি আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে যাত্রীদের মধ্যে। ফলে এখন অনেকটাই শূন্য পড়ে থাকে লঞ্চঘাট। অল্প কিছু যাত্রী নিয়েই এখন সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের। হাক-ডাক করলেও এখন লঞ্চের দিকে পা বাড়াতে চায় না সাধারণ যাত্রীরা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নদীপথে ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল এড়াতে তৎপর এখন যাত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলেই। লঞ্চ, ফেরি, স্পিডবোটে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ চলাচলকারী লঞ্চগুলোর ফিটনেস, সার্ভে ও টাইমটেবিলসহ নদীর আবহাওয়া বুঝে চলাচলের বিষয়টি তদারকির জন্য উভয়ঘাটেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম রয়েছে।

এ ছাড়া ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যরে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে মাওয়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ। আর স্পিডবোটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক ব্যবহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবং প্রতিটি বোটেই প্রত্যেক যাত্রীর লাইফ জ্যাকেটের পাশাপাশি বয়া রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এব্যপারে উভয় পাড়ের পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর কাওড়াকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ লঞ্চ ডুবির পর এখন পর্যন্ত ফেরিতে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকে। আগে যেটা ছিল না। অনেক যাত্রীদের রোরো ফেরিতে পার হবার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করতেও দেখা যায়। যাত্রীরা লঞ্চে যেতে ভয় পায় এখনও। তারা ফেরিকে নিরাপদ মনে করে।’



মন্তব্য চালু নেই