লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না জঙ্গি আবিরের স্বজনরা

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গি আবিরের স্বজনরাও লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না। আবিরের চাচা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার ভাতিজা জঙ্গি একথা শুনে আমার সবাই হতবাক। এখন গ্রামের মানুষের কাছে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না।

ভাতিজা জঙ্গি তা কল্পনাও করতে পারছেনা শহিদুল ইসলাম। প্রতিবেশীরাও মানতে পারছে না তাদের গ্রামের সন্তান জঙ্গি। ঈদের পরদিন থেকে খোঁজখবর নিতে তার গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন দেবিদ্বার থানা পুলিশ। সেই সাথে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরাও ভিড় করছেন আবিরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের ত্রিবিদ্যা গ্রামে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় দেবিদ্বার থানার ওসি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল আবিরের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে প্রথমবার উপজেলার ভানী ইউনিয়নের ত্রিবিদ্যা গ্রামে যায়। এরপরও কয়েক দফায় খোঁজখবর নিয়েছে পুলিশ।

সেদিনই পুলিশ এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আবিরের বাসায় ফোন করেই তার নিহত হওয়ার খবর জানতে পান বলে জানান আবিরের চাচা শহিদুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই অহিদুর রহমান।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, নিহত আবির রহমান দেবিদ্বারের ত্রিবিদ্যা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। সিরাজুল ইসলাম পল্লী বিদ্যুতের প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে ঢাকার বসুন্ধরায় থাকেন। তার ছোট ছেলে আবির ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চার ভাই-বোনের মধ্যে আবির সবার ছোট ছিল। আবিরের এক বোনও ছিল। বোনটি ছোট বেলায় মারা যায়। বড়ভাই আশিকুর রহমান (৩২) ও মেঝো ভাই আরিফুর রহমান (২৬) অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। আর সেঝো ভাই আসিব রহমান বাবার সাথে পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদারী ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

সিরাজুল ইসলামের ছোট ছেলে নিহত আবির প্রায় ৮ মাস আগে বসুন্ধরার বাসা ছেড়ে যায়। এ নিয়ে ঢাকার ভাটারা থানায় জিডি করা হয়। আবিরের জন্মও ঢাকার বাসায়। সে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল ইনস্টিটিউট থেকে এ লেভেল সম্পন্ন করে।

তার বাবা সিরাজুল ইসলাম এসএসসি পরীক্ষার পরই ঢাকা চলে যান। বাড়িতে ভিটে মাটি থাকলেও কোনো ঘর নেই ঠিকাদার সিরাজুল ইসলামের। সিরাজুল ইসলাম বছরে দু-একবার জমিজমার হিসাব নিতে আসেন গ্রামের বাড়িতে। সে সুবাদে আবিরেরও তেমন একটা আসা হয়নি গ্রামে।

ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করা আবিরের জঙ্গি কার্যক্রম বিশ্বাস করতে পারছে না পরিচিত স্বজনরা। আবিরের চাচা শহিদুল্লাহ সরকার ও ভগ্নিপতি নাসির উদ্দিনসহ স্বজনরা জানান, আবির হোসেন ছোট বেলায় খুব শান্ত প্রকৃতির ছিল। সে যখনই গ্রামে যেত, মেতে থাকতো পশুপাখি নিয়ে। গ্রামে একটি বিড়াল পোষত আবির। এমন ছেলে বড় হয়ে জঙ্গি হয়ে উঠবে তা কল্পনাও করতে পারছে না গ্রামের থাকা তার চাচার পরিবার।

এদিকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান জানান, দীর্ঘদিন থেকেই ঢাকায় বাস করায় তাদের সম্পর্কে খুব বেশি জানেন না। তারপরও আবির ভানী ইউপির সন্তান তাই বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন এই জনপ্রতিনিধি।

দেবিদ্বার থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওইদিন বিকেলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি মহোদয়ের ফোন পেয়ে আবিরের বাড়িতে ছুটে এসেছি। কিন্তু নিহত আবিরের পরিবারের লোকজনের সাথে বাড়ির স্বজনদের কোনো যোগাযোগ না থাকায় তারা নিহত আবির সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি।’

উল্লেখ্য, আবির রহমান (১৯) ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠের অদূরে পুলিশের উপর হামলার সময় গুলিতে নিহত হয়। আবিরের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার ত্রিবিদ্যা গ্রামে। ওই গ্রামে মাত্র একটি বাড়ি। বাড়িটি মূন্সী বাড়ি নামেই পরিচিত।



মন্তব্য চালু নেই