লংকা লজ্জা মুছতে পারবেন মাশরাফি?

একসময় শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর আগেই হেরে বসত বাংলাদেশ দল। মুত্তিয়া মুরালিধরণ-চামিন্দা ভাসরা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠতেন! আবার বোলিংয়ের সময়ও লংকান ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশের বোলারদের ওপর তোপ দাগতেন।
কখনো মারভান আতাপাত্তু, কখনো সনাৎ জয়াসুরিয়া আবার কখনো দুই বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনে-কুমার সাঙ্গাকারা একসঙ্গে জ্বলে উঠতেন। শেষের দুইজন সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। শুধু বাংলাদেশ বললে ভুল হবে, বাকি দলগুলোকেও। এই দু’জন উইকেটে জমে গেলে তাদের ড্রেসিংরুমের রাস্তা দেখানোটা কঠিন। বর্তমান লংকান দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের বড় ভরসার নামও মাহেলা-সাঙ্গা।
মাশরাফি বিন মুর্তজার বড় দুশ্চিন্তার নামও এই দু’জন। বোলিংয়ে এক লাসিথ মালিঙ্গা ছাড়া ভীতি ছড়ানোর মত কোন পেসার নেই লংকানদের। হাত ঘোরাবেন রঙ্গনা হেরাথ। নিশ্চয় মুরালিধরণের মত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারবেন না! লংকান ব্যাটিং না বাংলাদেশের বোলিং? দেখতে আপনাকে চোখ রাখতে হবে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ সময় সকাল ৯.৩০ মিনিটে।
বাংলাদেশের ম্যাচের দিকে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব চোখ না রাখলেও একজনের দিকে ঠিকই রাখে। তিনি সাকিব আল হাসান। যিনি কিনা ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপ শুরুর দিনকয়েক আগে স্বয়ং মুরালিধরণ সাকিবকে নিয়ে বলেছেন, ‘স্মার্ট বোলার। বল হয়তো খুব বেশি ঘোরে না। কিন্তু জানেন কিভাবে উইকেট তুলে নিতে হয়।’
শুধু মুরালিধরণ কেন, সাকিবে প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা ক্রিকেট দুনিয়াই। লংকানরাও এটা ভাল করেই জানেন বল কিংবা ব্যাট দু’ জায়গায়ই সমান পারঙ্গম বাংলাদেশ ক্রিকেটাকাশের সবচেয়ে বড় তারকা। যার প্রমাণ কিছুটা পেয়েছে আফগানরা। ব্রিসবেনের গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ভেসে না গেলে অসিরাও হয়তো দেখতে পেতেন সাকিব ক্যারিশমা!
আগের বাংলাদেশ আর এই বাংলাদেশ দলের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক সেটা অধিনায়ক মাশরাফির কথায় পরিস্কার। তার মতে, নিজেদের মত করে খেলতে পারলে লংকা বিজয় অসম্ভব কিছু নয়, ‘আমরা যদি পরিকল্পনা করে খেলতে পারি তাহলেই শ্রীলংকাকে হারানো সম্ভব।’
তা মাশরাফি যতই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার কথা বলুন না কেন, অতীত তো আর এত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলা যায় না। ২০০৩ বিশ্বকাপে চামিন্দা ভাস যে দুঃসহ যন্ত্রণা দিয়েছিল বাংলাদেশকে সেটা ভোলার নয়।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট! বাংলাদেশকে হারতে হয়েছিল ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। ২০০৭ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশকে হারতে হয়েছিল ১৯৮ রানের বড় ব্যবধানে।
বিশ্বকাপে দু’বারই মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-শ্রীলংকা। শুধু হারই নয়, দু’বারই বাংলাদেশ পেয়েছিল বড় লজ্জা। এবার মাশরাফির সামনে সেই লজ্জা মোচনের পালা। বাংলাদেশ অধিনায়ক কি পারবেন লংকানদের পরাজয় উপহার দিয়ে ওই লজ্জা কিছুটা হলেও দেশবাসীকে ভুলিয়ে দিতে?
দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন মাশরাফিও, ‘বিশ্বকাপে শ্রীলংকার বিপক্ষে আমরা যে দুটি ম্যাচ খেলেছি ওই ম্যাচগুলোতে অনেক খারাপ খেলেছি। নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে শ্রীলংকাকে না হারানোর কোন কারণ দেখি না।’
গত বছর শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সবগুলোই হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু দুটি ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ের খুব কাছে গিয়েও জিততে পারেনি। তার আগে এশিয়া কাপে লংকানদের হারানোর সুখস্মৃতি রয়েছে বাংলাদেশের।
সবমিলে বাংলাদেশ-শ্রীলংকার মুখোমুখি দেখায় শ্রীলংকা ৩৭ আর বাংলাদেশ জিতেছে চারবার। তৃতীয় শ্রীলংকান এবং ক্রিকেট বিশ্বে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে এ ম্যাচেই ৪০০ ওয়ানডে খেলার কীর্তি গড়তে যাচ্ছেন সাঙ্গাকারা। এই ম্যাচ দিয়েই এমসিজিতে অভিষেক হচ্ছে বাংলাদেশের এমসিজিতে ১৭ ম্যাচ খেলে ছয়টিতে জিতেছে শ্রীলংকা।
বাংলাদেশ (সম্ভাব্য): তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, এনামুল হক, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান, মুমিনুল হক, মাশরাফি মর্তুজা, রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ,
শ্রীলংকা (সম্ভাব্য): লাহিরু থিরিমান্নে, তিলকারত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা, দিমুথ করুনারতেœ, মাহেলা জয়াবর্ধনে, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, থিসারা পেরেরা, দুশমন্ত চামারা, রঙ্গনা হেরাথ, লাসিথা মালিঙ্গা এবং সুরঙ্গ লাকমল।



মন্তব্য চালু নেই