রোহিঙ্গা ঢোকাতে এপার-ওপার সীমান্তে সক্রিয় অর্ধশত দালাল

রোহিঙ্গা ঢোকাতে ৫২ দালাল সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। দালালদের হাত ধরে নাফ নদী দিয়ে রাতের অন্ধকারে দলে দলে রোহিঙ্গা ঢুকছে। প্রতিটি নৌকায় আসছে পাঁচ-সাতজন রোহিঙ্গা। টেকনাফ ও উখিয়ার ৩০টির বেশি দুর্গম পয়েন্ট দিয়ে এপারের ৫২ দালাল ওপারে নৌকা পাঠিয়ে রোহিঙ্গা আনছে। টাকার বিনিময়ে দালালরা এ কাজ করছে। যোগাযোগ হচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। আর এপার-ওপার দুই পারেই রয়েছে দালালদের লোকজন। কয়েকজন দালালের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

গত চার দিনে পুলিশ ও বিজিবি অভিযান চালিয়ে ১২ দালালকে আটক করেছে। বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ টহলে থাকলেও রোহিঙ্গা ঢোকাতে দালালরা নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে।

গতকাল সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে টেকনাফ নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ও অনিবন্ধনকৃত লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এখানে প্রতিটি ঘরে চোখমুখে আতঙ্ক নিয়ে বসে আছে শত শত রোহিঙ্গা। অনেকেই আছে গুলিবিদ্ধ ও আহত অবস্থায়।

কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখানে অনেকটা নিরাপদ আশ্রয় মিলছে তাদের। মুখে মিলছে করুণ ও লোমহর্ষক নির্যাতনের কাহিনী। মিয়ানমারের সেনারা সেখানে বর্বর নির্যাতনের পাশাপাশি ধর্ষণ ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং লুটপাট করছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুসারে, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংগ্যাঘোনা, লম্বাবিল, কানজরপাড়া, মিনাবাজার, খারাংখালী, হ্নিলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার, নাটমুড়াপাড়া, রঙ্গিখালী, লেদা, মুচনি, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, টেকনাফ পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, বড়ইতলী, হেচ্ছারখাল, নাইটংপাড়া, কাটাবনিয়া, কোলালপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাজারপাড়ার জেটিঘাট, শাহপরীরদ্বীপের জালিয়াপাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের আলুগুলার প্রজেক্ট ও নয়াপাড়া পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। এছাড়া উখিয়া উপজেলার ঘুমধুম, বালুখালী, থাইংখালী রাহমতের বিল এবং পালংখালী পয়েন্ট দিয়েও রোহিঙ্গা আসছে। এসব পয়েন্টে সক্রিয় রয়েছে দালালরা।

স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ৫২ দালালের কথা জানালেও জানা গেছে এর সংখ্যা একশর বেশি হবে। দালালদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের লোকজনই রয়েছে।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, জেলায় ৫২ জন দালালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা ধরে পুলিশ ১০ জন ও বিজিবি দুজনকে আটক করেছে। আটকদের ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু জার আল জাহিদ জানান, সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে। কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে তারা। তবে রাতের অন্ধকারে অনেক দুর্গম এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢোকার চেষ্টা করছে। যারা ধড়া পড়ছে তাদের পুশব্যাক করা হচ্ছে। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল মজিদ জানান, তার কাছে ৪০ দালালের নাম রয়েছে। কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, দালাল ধরা অভিযানের কারণে রোহিঙ্গা আসা অনেকটা কমে গেছে।



মন্তব্য চালু নেই