রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সহায়তা চায় ইন্দোনেশিয়া

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সহিংসতা নিয়ে কথা বলা বলতে মঙ্গলবার বাংলাদেশে সফর করেছেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদি। রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য একটি সঠিক সমাধান বের করে নাইপিয়াদাও এবং ঢাকার মধ্যে চলমান উত্তেজনার অবসান করতেই এ সফর করলেন তিনি। খবর বিবিসি, দ্য জাকার্তা পোস্টের।

এই সফরে মারসুদি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। সে সময় তিনি রাখাইন রাজ্যের দাঙ্গা পরিস্থিতি এবং সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একদিনের সফর শেষে মঙ্গলবার রাতেই ঢাকা ছেড়েছেন মারসুদি।

মারসুদি কক্সবাজারের উখিয়ায় গিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রথম কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন মারসুদি। সেসময় তার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীও ছিলেন।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমারে আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পরই বাংলাদেশে সফর করলেন মারসুদি। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া যে ভূমিকা রাখতে চাইছে সেটাই নির্দেশ করছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর।

ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের প্রভাবশালী দেশ ইন্দোনেশিয়া। রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির এ উদ্যোগ যথেষ্ট ইতিবাচক।

তবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার এমন ভূমিকা রাখার চেষ্টায় কিছুটা অবাক হয়েছেন সাবেক এ কূটনীতিক। তার মতে, ইন্দোনেশিয়া প্রধান উদ্যোগী হয়ে ২০০৫ সালে মিয়ানমারকে আসিয়ানের সদস্য করেছিল। তখন থাইল্যান্ড আপত্তি জানিয়েছিল এবং রোহিঙ্গা বিষয়ের উপর তারা জোর দিয়েছিল। কিন্তু সে সময় ইন্দোনেশিয়া মিয়ানমারের পক্ষেই ভোট দিয়েছে।

এতো বছর পরে এসে ইন্দোনেশিয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভিন্নভাবে চিন্তা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নাসিম ফেরদৌস মনে করেন, আসিয়ান জোটভুক্ত দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ আসিয়ানের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিমান দেশ।

আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সিঙ্গাপুর এগিয়ে থাকলেও রাজনৈতিকভাবে সবগুলো সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়াকে সমীহ করে চলে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য ইন্দোনেশিয়া তাদের এ উদ্যোগকে যদি শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নেয় তাহলে সেটা ভালো ফলাফল দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর দমন-পীড়নের ঘটনায় হাজার-হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, গত একমাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে প্রায় ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশকে সরাসরি প্রভাবিত করলেও এ বিষয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রতিক্রিয়া জোরালো বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার সরকারের উপর হয়তো দেশের অভ্যন্তরীণ চাপ আছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সম্পর্কও খুব ভালো। এসব কারণে হয়তো এবার ইন্দোনেশিয়া বেশি উদ্যোগী হয়েছে বলে তিনি ধারণা করছেন।

অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিকভাবে মিয়ানমার আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে লাভবান হচ্ছে। সেজন্য আসিয়ানের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া যদি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখে তাহলে সেটি উপেক্ষা করা মিয়ানমারের পক্ষে কঠিন হবে বলে।

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর বর্বর নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণের মত ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। দেশটিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক বলে বিবেচনা করা হয় না। তবে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনের কথা বরাবরই অস্বীকার করছে মিয়ানমার।



মন্তব্য চালু নেই