রোহিঙ্গারা ইন্দোনেশিয়ায় মরলেও মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা ইন্দোনেশিয়ায় মরে যেতে রাজি। কিন্তু স্বদেশে ফিরতে চায় না তারা। তারা স্বদেশে ফিরতে চায় না কি না প্রশ্ন করা হলে রোববার বলেছে, এই সপ্তাহে বাংলাদেশী নৌকায় করে তাদের উপকূলে পৌঁছানো অনেক অভিবাসীকে তারা স্বদেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু নৌকায় থাকা মুসলিম রোহিঙ্গাদের জন্য পরিস্থিতি অনেক সঙ্কটাপূর্ণ।

হিলমি বকর আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, ‘আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তারা তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে চায় কি না এবং তাদের সবাই তা অস্বীকার করেছে।’

দেশটির মানবাধিকারবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা হিলাল মেরাহ বলেছে, রোহিঙ্গারা বলেছে, তারা বরং ইন্দোনেশিয়াতে মৃত্যুবরণ করবেন কিন্তু এমন কোনো স্থানে ফিরে যাবেন না, যেখানে তারা বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘তাদের অনেকে কাঁদছিল ও ইন্দোনেশিয়াতে থাকার প্রার্থনা করছিল। স্বদেশে ফিরে গেলে সেটা তাদেরকে আরো অনিরাপদ করে তুলবে।’
মে মাসের ১ তারিখে থাইল্যান্ড তাদের দক্ষিণাঞ্চলে মানবপাচার বন্ধের অভিযান শুরু করার পর ৮২৭ জন রোহিঙ্গাসহ ১৪৮৬ জন অভিবাসী সুমাত্রার উত্তরাঞ্চলীয় প্রান্তে অবস্থিত আচেহ প্রদেশে পৌঁছায়। থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের এই রুটটি মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের প্রচলিত রুট।

হাজার হাজার অভিবাসী এখনো সাগরে ভাসছে। অনেক ক্ষেত্রে পাচারকারীরা তাদের লোকসান কমাতে তাদেরকে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে নামিয়ে দিচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের সংবাদ সংস্থা কালাদান প্রেস নেটওয়ার্কের সম্পাদক তিন সোয়ি আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, মিয়ানমারে ফিরে তাদের জীবিকা, স্বাস্থ্য অথবা শিক্ষার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রায় সব অভিবাসীই তাদের যাত্রা বাংলাদেশ থেকে শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘তারা বার্মিজ (মিয়ানমার) সরকারের কাছে সব অধিকার হারিয়েছে। তারা সরকারি কোনো চাকরি পায় না, তারা কোনো শিক্ষা পায় না, তারা চলাচল করতে পারে না, তারা কোনো কিছুই করতে পারে না। তাই তারা (বেঁচে থাকার জন্য) বাংলাদেশ অথবা মালয়েশিয়া যায়।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের আচরণের কারণে তারা স্থান ত্যাগ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘মানুষ অর্থনৈতিক কারণে চলে যাচ্ছে না, তারা নিপীড়ন নির্যাতনের কারণে চলে যাচ্ছে।’

হোকশেউমায়ি অভিবাসন অফিসের পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগ বিভাগের প্রধান আলবার্ট ডিজেলিয়াস রোববার আনাদোলু এজেন্সিকে ফোনে বলেন, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশীরা আলাদাভাবে অবস্থান করছে ও তাদেরকে আচেহের অভিবাসন অফিসে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ডিজেলিয়াস বলেন, ‘নতুন আশ্রয়কেন্দ্রে স্বদেশ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার কাজ চলছে।’

তিনি আরো বলেন, জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের একটি দল অভিবাসীদের মধ্যে থেকে কে প্রকৃত শরণার্থী ও কে চাকরিপ্রার্থী তা চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশীরা মালয়েশিয়ায় চাকরি খুঁজতে যান।’ তিনি আরো বলেন, শনিবার অভিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: নাজমুল কুয়াওনাইন তাদেরকে স্বদেশে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।

অভিবাসীদের মধ্যে যারা আবদ্ধ, জনাকীর্ণ নৌকায় করে পৌঁছেছেন তাদের অনেকে পানিশূন্যতা, জখম, ট্রমা রোগে ভুগছিলেন ও অনেকের হাড় ভাঙা ছিল। ডিজেলিয়াস বলেন, এসব অভিবাসীর অবস্থার উন্নতি হয়েছে ও একই সাথে অভিবাসী শিশুরা স্থানীয় শিশুদের সাথে মিশছে।
তিনি বলেন, সরকার, ইন্দোনেশিয়ান রেড ক্রস, সেনাবাহিনী ও আচেহ সোসাইটির বিরাট সহায়তায় এটা করা হয়েছে।

সুনামিতে আচেহ প্রদেশে এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে অথবা হারিয়ে গেছে। তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা হিসেবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা গ্রহণ করেছে।

আচেহর বাসিন্দা হেন্দাই পারমানা শনিবার ফোনে আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, পাংকালান সুসু আশ্রয়কেন্দ্রের কাছে যারা বসবাস করেন তারা রোহিঙ্গাদের খাবার, পোশাক ও কম্বল দিয়ে সহায়তা করছেন। তিনি বলেন, ‘মুসলমান হিসেবে আমাদের একে অপরকে সহায়তা করতে হবে।’ এ দিকে, সাবেক ইন্দোনেশিয়ান প্রেসিডেন্ট সুশিলো বামবাং ইউধোইয়োনো নৌকায় আসা অভিবাসীদের প্রতি স্থানীয় মানুষের সহায়তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন।

তিনি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী শরণার্থীদের প্রতি আচেহর মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত মানবিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি আমি অনেক আগ্রহের সাথে প্রত্যক্ষ করেছি।’



মন্তব্য চালু নেই