রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায় মিয়ানমার

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায় মিয়ানমার। দেশটির রাষ্ট্রদূত মিউ মিন্ট থান সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে মিয়ানমান সরকারের আগ্রহের বিষয়টি জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

উল্লেখ্য, ৯ অক্টোবরের পর মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার কারণে শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। বিশ্বব্যাপী এ গণহত্যার নিন্দা ও প্রতিবাদ শুরু হলে মিয়ানমার ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সুয়েকে প্রধান করে এ সামগ্রিক অভিযোগের তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করে। ওই কমিশনের কাজ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে মিয়ানমার যত শিগগিরই সম্ভব একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে চায় কক্সবাজার পরিদর্শনের জন্য।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিনিধি দলে কতজন সদস্য থাকবেন, কতদিন থাকবেন, কিভাবে কাজ করবেন, পরে এ ব্যাপারে তারা বিস্তারিত জানাবে।’ প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত এবং প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরে এ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবে বলে তিনি জানান।

সীমান্ত পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনও রোহিঙ্গারা নিরাপত্তাহীনতার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। মিয়ানমার সরকার তাদের প্রতি এখনও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, অত্যাচার করছে। বাংলাদেশ এখনও সীমান্ত বন্ধ রেখেছে।’ বাংলাদেশ সীমান্তে সব ধরনের মানুষের চলাচল বন্ধ আছে বলে তিনি জানান।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এর আগে রাখাইন প্রদেশের উন্নয়নের জন্য জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই কমিটির তিন সদস্য বাংলাদেশ সফর করেছেন।’

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার ইয়াংঘি লি রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখার জন্য কক্সবাজার সফর করেন। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা নিরসনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের ওই বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার।

ঢাকা ও কক্সবাজারে চার দিনের সফর শেষে ইয়াংঘি লি বলেন, ‘আমি যা ধারণা করেছিলাম, তারও কয়েকগুণ বেশি সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন রোহিঙ্গারা।’

ইয়াংঘি লি গত ২০ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ও কক্সবাজারে সফর শেষে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ইয়াংঘি লি একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি।’

কক্সবাজার সফরকালে ইয়াংঘি লি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনেন। এর মধ্যে রয়েছেন রোহিঙ্গাদের গলা কেটে ফেলা, গুলি বর্ষণ করা, বন্দি করে ঘরে আগুন দেওয়া, শিশুদের আগুনে ছুড়ে মারা, গণধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনার বর্ণনা। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে প্রতীয়মান হয়।’ তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও সহিংসতা বন্ধের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়া রোহিঙ্গাদের প্রতি সংঘটিত অপরাধের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তেরও দাবি জানান।



মন্তব্য চালু নেই