রোগী ফেলে ডাক্তার ব্যাডমিন্টন মাঠে

শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাজেন্দ্র ত্রিপুরার ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে বুধবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আশরাফুল হোসেন ও তার শিশু কন্যা আফরিন আক্তার। কিন্তু ভালো চিকিৎসা হচ্ছেনা তাদের। ডাক্তাররা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছেন না।

রাত নয়টায় বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন আশরাফুল (৩২) ও আফরিন (৭)। কিন্তু তাতে কী? ওই সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ত্রিটন চাকমা কোয়ার্টারে গিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলায় ব্যস্ত।

হাসপাতালের অফিস কক্ষে গিয়ে এক মেডিকেল সহকারীকে পাওয়া গেল। কর্তব্যরত ডাক্তার কোথায়? মেডিকেল সহকারী জানালেন, ডাক্তার রাউন্ড-আপে দ্বিতীয় তলায় গেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় তলায় গিয়ে ডাক্তারকে পাওয়া গেলনা।

তবে যে মেডিকেল সহকারী বলেছিলেন, ডাক্তার রাউন্ড-আপ ডিউটিতে দ্বিতীয় তলায় আছেন! কর্তব্যরত নার্সকে ডাক্তারের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, উপরে কোন ডাক্তার আসেননি!! অর্থাৎ মিথ্যা বলেছেন মেডিকেল সহকারী।

নিচে এসে হাসপাতালের এক পিয়নের কাছ থেকে জানা গেল, দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডা. ত্রিটন চাকমা ডাক্তারদের আবাসিক কোয়ার্টারের মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, ডা. ত্রিটন চাকমা অন্যান্য চিকিৎসকদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলছেন। সাংবাদিক এসে পড়েছে বুঝে হন্তদন্ত হয়ে মাঠ থেকে বের হয়ে আসলেন ত্রিটন চাকমা।

জানতে চাইলে বললেন, “রোগী না থাকায় একটু খেলাধুলা করছি। আর একটু আগে সড়ক দুর্ঘটনার যে রোগীরা এসেছে তাদের দেখে বেডে পাঠিয়েছি। খেলা শেষে গিয়ে আবার রাউন্ডআপে যাব।”

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. নয়নময় ত্রিপুরাও তখন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। মুঠোফোনে কল দিয়েও কথা বলা যায়নি। রোগী ফেলে দূরে গিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলার বিষয়ে কথা বলেছিল সিভিল সার্জন ডাক্তার নিশিত নন্দী মজুমদারের সঙ্গে।

নিশিত মজুমদার বললেন, “অফিস টাইমে কর্তব্যরত চিকিৎসককে অবশ্যই হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান করতে হবে। যদি কেউ তা না করেন তবে সেটি নিয়মবর্হিভূত। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি”।

উল্লেখ্য, বুধবার রাত আটটার দিকে জেলা শহরের মাস্টারপাড়ামুখ এলাকায় শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রাজেন্দ্র ত্রিপুরার ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় আজির আলীর ছেলে আশরাফুল হোসেন ও তার শিশু কন্যা আফরিন আক্তার গুরুতর আহত হন। এরা জেলার গামারীঢালা এলাকার বাসিন্দা।

এর আগেও ডা. রাজেন্দ্র ত্রিপুরার বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ উঠেছে। গেল বছর অস্বাভাবিক অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে এক শিশুকে চাপা দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন ডাক্তার রাজেন্দ্র। সে ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শীর্ষ প্রশাসন। নতুন ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।



মন্তব্য চালু নেই