রিজার্ভ লোপাটে জড়িত চীনা ব্যবসায়ীর পাসপোর্ট উদ্ধার

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন চীনা নাগরিক উইক্যাং ঝু’র পাসপোর্টের একটি কপি উদ্ধার করেছে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ। দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি) তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৬’শ মিলিয়ন পেসো (ফিলিপাইন মুদ্রা) এবং ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঝু’র অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

এএমএলসি’র তদন্ত প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, রিজাল ব্যাংকের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার চার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানীয় মুদ্রায় রুপান্তর করেছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন প্রতিষ্ঠান পিলরেম করপোরেশন। অবৈধ পন্থায় ফিলিপাইন ব্যাংকে আসা এ অর্থ ভাগাভাগি নিয়ে দেশটির সিনেট কমিটির শুনানিতে এ তথ্য জানিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা।

পিলরেম প্রেসিডেন্ট সিনেট কমিটিকে আরও জানান, রুপান্তরিত অর্থ চীনা ব্যবসায়ী উইক্যাং ঝু, তার পরিচালিত ইস্টার্ন হাওয়াই কোম্পানি এবং ব্লুমব্যারি হোটেলসের (সোলারি রেসট) বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়।

ইংরেজিতে ইস্যু করা এ পাসপোর্টে দেখা যায়, উইক্যাং ঝু’র বয়স ৪৪ বছর এবং জন্ম তারিখ ১৯৭২ সালের ৩ নভেম্বর।২০১১ সালের ২৩ মে চীনের পাবলিক সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় উইক্যাং ঝু’র পাসপোর্টটি ইস্যু করে। পাসপোর্টটির মেয়াদ রয়েছে ২০২১ সালের ২৪ জুন পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে লোপাটের এ তথ্য ফিলিপাইনের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইনকোয়েরারে প্রকাশের পর তদন্তে চীনা এ ব্যবসায়ী নাম উঠে আসে। তখন উইক্যাং ঝুকে বলা হয়েছিল চীনা জানকেট অপারেটর। অর্থ লোপার্টে অন্যতম হোতা হিসেবে নাম উঠে আসায় সোলারি রেসট কর্তৃপক্ষ দ্রুত উইক্যাং ঝু’কে স্রেফ একজন জুয়া খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে।

সোলারি রেসট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অর্থ লোপাটে নিয়ে তদন্তের শুরুতে রেসটের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ফিলিপাইন অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল। তখন সোলরি রেসট কর্তৃপক্ষ সেখানে উইক্যাং ঝু’র অবাধ যাতায়াত ও জুয়া খেলায় বিধিনিষেধ আরোপ করে।

তদন্ত শেষে অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল সোলারি রেসটের স্বত্বাধিকারী উইক্যাং ঝু এবং আরেক ব্যবসায়ী কিম ওয়াংয়ের বিরুদ্ধে ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লোপাটে জড়িত থাকার অভিযোগ দেয় আদালতে।

বিপুল অংকের এ অর্থ লোপাটের ওপর ফিলিপাইন সিনেটে শুনানিতে কমিটির প্রধান সিনেটর সার্জি ওসমেনা বলেছেন, ব্যবসায়ী কিম ওয়াং এ লোপাটে সন্দেহভাজনদের একজন। সোলারি রেসটের স্বত্বাধিকারী উইক্যাং ঝু’র সংশ্লিষ্টতা নিয়েও বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ হয়র্ক থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার লোপাট করে দুর্বৃত্তরা। লোপাটের এ অর্থের ৮১ মিলিয়ন পাঠানো হয় ফিলিপাইনের রিজাল কমাশিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার চার অ্যাকাউন্টে। সেখান থেকে এ অর্থ নিয়ে যাওয়া হয় জুয়ার বোর্ডে।

বাকী ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকার একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামে খোলা অ্যাকাউন্টে। প্রাপক সংগঠনের নামের বানানে ভুল থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আটকে দেয় পেমেন্ট। এ মাসের মাঝামাঝি ওই সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ৬ পরিচালককে চিহ্নিত করে তাদের বিদেশ যাওয়ায় বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির একটি আদালত।



মন্তব্য চালু নেই