রিজার্ভ চুরি : ফিলরেমের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি করে ফিলিপাইনে নিয়ে যাওয়া ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিলি-বণ্টনে জড়িত থাকায় দেশটির বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অর্থ পাচার আইনে বৃহস্পতিবার আদালতে এ মামলা করেছে দেশটির এন্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিল (এএমএলসি)।

ফিলিপাইনের অর্থ পাচার আইনের ৪(এ), (বি)এবং (এফ) ধারা লংঘনের দায়ে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা, ট্রেজারার মাইকেল বাতিস্তা এবং প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মকর্তা অ্যানথনি পালেজোর বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। আইনের এসব ধারায় অর্থ পাচারের বিস্তারিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ফিলরেমের ভূমিকা প্রচলিত বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

মামলার আর্জিতে এএমএলসি আরো বলেছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি করে নিয়ে আসা টাকা বিলি-বন্টন দেশের বিদ্যমান ইলেক্ট্রনিক কর্মার্স অ্যাক্টের ৩৩ (এ) ধারার পরিপন্থী।

রিজার্ভ চুরি নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের উল্লেখ করে সরকারি এ সংস্থা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিপুল এ অর্থ রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার সন্দেহজনক চার অ্যাকাউন্টে জমা হয়। অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা হলেন, মাইকেল ক্রুজ, জেসি খ্রিস্টোফার লাগ্রোসাস, আলফ্রেড ভারগারা এবং এনরিকো ভাসকোয়েজ। ২০১৫ সালের মে মাসে ভুল ঠিকানা ব্যবহার করে রিজাল ব্যাংকের জুপিটার শাখায় এ চার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল।

মামলার তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলা হয়েছে, চুরির ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৬৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ওই চার ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে ক্যাসিনো জাংকেট উইলিয়াম গো’র কাছে পাঠানো হয়। ওই হাত ঘুরে বেশিরভাগ টাকা চলে যায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারি প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস করেপোরেশনের কাছে।

আরো ১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যায় আরেক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান আবা কারেন্সি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির অ্যাকাউন্টে। এ টাকা দেয়া হয় ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। একই দিন আরো সোয়া ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়া হয় বেকন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ কোম্পানির অ্যাকাউন্টে।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির ৫, ৯ এবং ১০ তারিখে তিন দফায় সাড়ে ৫২ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসি ব্যাংকের জুপিটার শাখায় উইলিয়াম গো’র অ্যাকাউন্ট এবং একই ব্যাংকে ফিলরেমের ইউনিমাট গ্রিনহিলস অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। একদিনের মধ্যে ভাসকোয়েজের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফিলরেমের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়।

মামলার আর্জিতে আরো বলা হয়েছে, ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের কর্মকর্তা পালেজো টাকা লেনদেন নিয়ে সন্দেহজনক প্রতিবেদন এএমএলসি’র কাছে হস্তান্তর করে। ওই প্রতিবেদনে ফিলরেম জানিয়েছে, উইলিয়াম গো’র নির্দেশে লেনদেন করা হয়েছিল। কিন্তু রিজার্ভ চুরি নিয়ে সিনেট কমিটির শুনানিতে ফিলরেমের প্রেসিডেন্ট সালুদ বাতিস্তা জানান, ওই লেনদেন হয়েছিল রিজাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক মাইয়া সান্তোস দেগুইতোর নির্দেশে।

এএমএলসি জানায়, তদন্তে এটি অত্যন্ত পরিষ্কার যে, ফিলরেমের দুই মালিক খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, বিপুল এ টাকা লেনদেন বৈধ নয়। এটা জেনেও আইনের প্রচলিত বিধান উপেক্ষা করেছেন ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশনের দুই মালিক।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে গোপন কোর্ড ব্যবহার করে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। চুরির এ টাকার ৮১ মিলিয়ন ডলার পাছানো ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের মাকাতি সিটির জুপিটার শাখার কয়েকটি অ্যাকাউন্টে।

বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠানো হয় শ্রীলংকা বেসরকারি সেচ্ছাসেবী সংগঠন শাকিলা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। প্রাপক সংস্থার নামের বানানে ভুল থাকায় ওই টাকার পেমেন্ট আটকে দেয় ব্যাংক কর্মকর্তারা।



মন্তব্য চালু নেই